Friday, May 25, 2018

অভিশাপ

"তুমি এই প্রথম এলে গাঁয়ে দিদি?"
"হ্যাঁ রে, এই প্রথম।"
"থাকো কোথায়? দিল্লী না?"
"হ্যাঁ। তুই কোন কলেজে পড়িস?"
"ঐ জেলা শহরে রাজা রামমোহন কলেজে।"
"কি পড়িস?"
"বাংলা।"
"বাহ, প্রিয় লেখক কে বাংলায়?"
"আমার তো সুনীল গাঙ্গুলি, তোমার?"
"আমার সমরেশ বসু।"
"তুমি দিল্লীতে থেকে বাংলা পড়তে জানো ? আমি তো জানতাম ওখানকার ছেলে মেয়েরা বাংলা পড়তে পারে না।"
"একদম ভুল ধারণা, আমাদের ওখানে বাংলা স্কুল আছে জানিস?"
"তাই নাকি? তুমি কি কলেজে পড়?"
"এই শেষ হল কলেজ। এবার দিল্লী বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে যাব।"
"তোমার কি বিষয়?"
"আমার তো অঙ্ক।"
"তুমি অঙ্ক করতে ভালোবাসো? ওরে বাবা, আমি অঙ্ককে যা ভয় পাই।"
কথা হচ্ছিল পল্লবীর সঙ্গে। বাবার ছোটবেলার বন্ধু সুবলকাকার মেয়ে। এই প্রথম আমি আমাদের দেশের বাড়ি মনসাচরে এলাম। আমার জন্ম কলকাতায়। কিন্তু খুব ছোটবয়সে আমরা দিল্লী চলে যাই। বাবা ওখানেই চাকরি করেন। ছুটিছাটাতে আমরা কলকাতায় আসতাম। আমার কাকারা কোলকাতায় থাকেন। কিন্তু মনসাচরে এই প্রথম। তার কারণ আছে। আগে আমাদের বাড়ি সম্বন্ধে বলে নি। আমার বাবার দুই সন্তান। আমি আর আমার দিদি। দিদির বিয়ে হয়ে গেছে দুই বছর হল। এখন দিদি ইন্দোরে থাকে। আমার মা আমার জন্মের সময় মারা যান। মাকে আমি কোনদিন দেখিনি।
এই মনসাচরে আমাদের জমিদারী ছিল। সেই পূরানো জমিদারবাড়ি এখনো আছে। বংশপরম্পরায় রঘুদারা এর রক্ষণাবেক্ষণ করে। এই পরিবারে কিছু একটা অভিশাপ আছে। এই বাড়ির কোন মেয়ে নাকি বেঁচে থাকে না এই মনসাচরে। তাই আমাকে কোনদিন এখানে নিয়ে আসেনি বাবা। এবার আমি প্রায় জোর করে এসেছি। তাতেও চোখের আড়াল হতে দেয় না বাবা। আমার এসব অভিশাপে বিশ্বাস নেই। আমি এসেছি অন্য কারণে। অভিশাপটা কিসের সেটা জানতে। এ নাকি অনেক পুরনো অভিশাপ। কারুরই প্রায় মনে নেই কেন এটা শুরু হয়েছিল। এই পরিবারের শেষ মেয়ে মারা গেছে আজ থেকে চল্লিশ বছর আগে আমার এক পিসী। তারপর থেকে আর কোন মেয়েকে এই মনসাচরে আনা হয়নি। আমার কাকার এক ছেলে।
ভয় যে আমার একদম করেনা তা না। সর্বক্ষণ মনে হয় কেউ যেন আমাকে দেখছে। সেদিন রাত্রে ঘুম ভেঙ্গে গেল। ঘরটা কেমন যেন গুমোট হয়ে উঠেছে। জানালা খুলতেই দেখি এক জোড়া চোখ আমার দিকে তাকিয়ে। একটু পরেই বুঝলাম সেটা একটা প্যাঁচা। এখানে খুব তাড়াতাড়ি সন্ধ্যা হয়। ঝুপ করে সন্ধ্যা নামে। তারপর বেশিরভাগ দিন লোডশেডিং। হ্যারিকেনের আলোয় এই জমিদারবাড়িটাই ভূতুরে লাগে। কাল ভাবছি রমেনদাদুর কাছে যাব। শুনেছি উনি অনেকদিন এখানে আছেন। উনি মনসাচরের ইতিহাস নিয়ে পড়াশুনো করেছেন। যত তাড়াতাড়ি এই প্রশ্নের উত্তর মেলে ভালো। প্রথম প্রথম দিল্লী ছেড়ে আসতে ভালো লাগলেও এখন যেন মন কেমন করছে।
"তা জানি বৈকি মা। তোমার পিসীকেও আমি দেখেছি। এক সময় তো তোমাদের বাড়িতে মেয়ে জন্মালে তাকে সঙ্গে সঙ্গে ডুবিয়ে মেরে দেওয়া হত বা দামোদরে ভাসিয়ে দেওয়া হত। তারপর থেকে মেয়ে হলেই তাকে অন্য কেউ দত্তক নিয়ে নিত।"
"কিন্তু এই অভিশাপটা শুরু কিভাবে হল রমেনদাদু?"
"অনেক অনেক বছর আগের কথা মা। আমারও পুরোটাই শোনা গল্প। তখন সবে বিলেতে প্রিভি কাউন্সিলের কাছে লড়ে রাজা রামমোহন রায় সতীদাহ প্রথা রদ করেছেন। কিন্তু তোমার এক পূর্বপুরুষ জমিদার ধীরাজ রায় এসব মানতেন না। এক ব্রাহ্ম এসে হিন্দু ধর্মের প্রথা পালটাবে এ তিনি হতে দেবেন না। তাই এই মনসাচরে রমরমিয়ে সতীদাহ চলত।"
"সে কি? সে তো বেয়াইনি?"
"আর জমিদারের কাছে আইন। ইংরেজ পুলিশ ছিল ধীরাজ রায়ের হাতের মধ্যে। তবে এক ঘটনায় সেটা বন্ধ হল।"
"এর সঙ্গে অভিশাপের কি সম্পর্ক?"
"আছে মা আছে। বলছি। একবার এক ইংরেজ গবেষক এই গাঁয়ে এল। সে যখন খবর পেল সতী হতে যাবে একটি মেয়ে, চলে গেল তাকে বাঁচাতে। ধীরাজ রায় সন্দেহ করেছিলেন এটা। তক্কে তক্কে ছিলেন। কিন্তু তাঁর বোঝার আগেই মেয়েটির বাপের কাছে পৌঁছে যায় সেই ইংরেজ ছেলেটি। বলে চিন্তা করবেন না, আপনার মেয়ের কিছু হবে না। সে ছেলে খবর দিল থানায়। কিন্তু থানার দারোগার কাছে সে খবর পৌঁছালো না। ধীরাজ রায়ের লেঠেল এসে জোর করে তুলে নিয়ে গেল মেয়েটিকে। ছেলেটির মাথায় মেরে তাকে ততক্ষণে অজ্ঞান করে রাখা হয়েছে। জ্বলন্ত চিতা থেকে মেয়েটি বাবা বাবা করে ডেকে উঠল। মেয়েটির বাবা সেই দৃশ্য দেখে অভিশাপ দিলেন ধীরাজ রায়কে যে তাঁর বংশেও কোন মেয়ে বেশিদিন বাঁচবে না এই ময়নাচরে। এই কথা শুনে রাগে ধীরাজ রায় বর্শা ঢুকিয়ে দিলেন মেয়েটর বাবার বুকে। ধীরাজ রায় যেটা ভুল করলেন সেটা হল ইংরেজ ছেলেটিকে না মারা। ছেলেটি কলকাতা ফিরে গিয়ে সব জায়গায় রটিয়ে দিল এ খবর। তারপর ইংরেজ সরকার পুলিশ এনে ধীরাজ রায়কে গ্রেফতার করল। যদিও কিছুদিন বাদেই ছাড়া পায়। তবে জেলে বসেই ধীরাজ রায় খবর পায় তার দশ বছরের মেয়ে সাপের কামড়ে মারা গেছে। তারপর থেকে এই মনসাচরেও সতীদাহ বন্ধ হয়।"
"তুমি কবে চলে যাবে?"
"এই তো পরশু সরস্বতী পুজো। তারপরের দিনই যাব। তুই বলছিলি না তোদের স্কুলে খুব ভালো পুজো হয়। আমি কোনদিন গাঁয়ের স্কুলে পুজো দেখিনি। যাব।"
"অবশ্যই এসো। আমি নিয়ে যাব তোমায়। দেখ সব ক্ষুদে ক্ষুদে মেয়েরা কেমন শাড়ি পরে যায়। আমি তো দু' বছর হল স্কুল ছেড়েছি। কিন্তু এখনো প্রতি বছর স্কুলের পুজোয় যাই।"
"ঠিক আছে পল্লবী, তাহলে ঐ কথাই রইল।"
দামোদারের এক পাড়ে একটা শ্মশান ছিল একসময়। এখন সেটা পোড়ো জমি। কেউ ব্যবহার করে না। সেই জমিটা পেরিয়ে পল্লবীদের স্কুল। একদিন নিয়ে গেছিল আমায়। শ্মশানটা পেরোতে একটু যেন কেমন কেমন লাগছিল আমার। কিন্তু সেই সময় পল্লবী গান ধরল। ওর এত ভালো গলা সব ভুলে গেলাম।
"তুই কে রে?"
"আমি ফুলি।"
"ফুলি তো বুঝলাম। কি চাই এখানে?"
"পল্লবীদি আলপনা দিতে চলে গেছে। আমাকে বলল তোমাকে নিয়ে যেতে।"
"তুই এইটুকু মেয়ে আমাকে নিয়ে যাবি?"
"আমি এইটুকু নই, আমার বারো বছর বয়স।"
"চল যাওয়া যাক।"
হলুদ রঙের লাল পাড় শাড়ি পরে আছে বাচ্চা মেয়েটি। আমার হাত ধরে নিয়ে চলল স্কুলের দিকে। আজ যেন এই এলাকাটা বেশি শুনশান লাগছে। সবাই কি স্কুলে গেছে?
শ্মশানের কাছে আসতেই ফুলি বলে উঠল -- "দিদি, আমার পা ব্যাথা করছে, আমাকে কোলে নেবে?"
আমি শাড়ি পরে আছি। এই অবস্থায় একটা বারো বছরের মেয়েকে কোলে নেব?
"দিদি নাও না, খুব পা ব্যাথা করছে।"
ফুলি যদিও বেশ রোগা, তাও!! দেখি চেষ্টা করে।
ও মা, বেশ হাল্কা তো, মনেই হচ্ছে না কিছু নিয়েছি।
"দিদি ঐ পাশেই আমার বাড়ি। একবার বাবার সঙ্গে দেখা করে যাই চল।"
"দেরি হয়ে যাচ্ছে ফুলি।"
"একটুখানি দিদি।"
শ্মশানের এ পাশে যে একটা ছোট কুঁড়ে আছে আগেরদিন খেয়াল করিনি। ফুলিকে নিয়ে ঢুকলাম। দরজা খোলাই ছিল। ঢুকে দেখি মেঝেতে একটা লোক পরে আছে। বুক থেকে গলগল করে রক্ত বেরোচ্ছে। কতদিনের মরা কে জানে? মাছি ঘুরছে। গা গুলিয়ে উঠল। দরজার দিকে এগোতে গিয়ে দেখি আমার পা নড়ছে না। ফুলিকে কোল থেকে নামাতে গেলাম। পারলাম না। এই কিছুক্ষণেই যেন ফুলির ওজন অনেক বেড়ে গেছে। এবার আমার দিকে তাকিয়ে হাসল ফুলি।
"পারবে না, আমাকে নামাতে পারবে না। ধীরাজ রায় আমাকে এই ভাবে কোলে করে তুলে আগুনে ফেলে দিয়েছিল। তখন আমার বারো বছর বয়স। আর কেউ আমাকে নামাতে পারবে না।"
এই বলে ফুলি অদৃশ্য হয়ে গেল। একি ঘরটা এত গরম হয়ে উঠছে কেন? আমার মাথা ঘুরছে। পা চলছে না। ফুলির বাবার দেহের পাশে আমি লুটিয়ে পড়লাম।

Wednesday, May 9, 2018

উপহার

পার্ক স্ট্রিট থেকে যখন সি বাসে উঠলেন মলয়বাবু, তখন সবে বিকেল পড়ছে। আজ অফিস থেকে হাফ ছুটি নিয়েছিলেন। ভিড় বাসে বসার জায়গা পেলেন না মলয়বাবু। চিন্তায় ছিলেন ট্রেন না মিস করেন। ঘড়ি যে দেখবেন তারও উপায় নেই।  হাওড়া স্টেশনে নেমেই ছুটলেন সাত নম্বর প্ল্যাটফর্মের দিকে। কর্ড লাইন সুপার দাঁড়িয়ে আছে। এটা গ্যালোপিং লোকাল। বর্ধমান পৌঁছাতে পৌঁছাতে সন্ধ্যা সাতটা। জনাই-এ এক চা-ওলার কাছ থেকে চা কিনে ভাবতে লাগলেন আজকের দিনটার কথা।

হ্যাঁ, আজ তাঁর বিবাহবার্ষিকী। দু' বছর আগে এই দিনে পারমিতার সঙ্গে তিনি সংসার শুরু করেন। গত বছর এই দিনটাও কিন্তু বিশেষ কিছু ছিল না। কিছুদিন আগে পাশের বাড়ির ঘোষগিন্নী এসে বললেন --
"আর আমার ছেলের তো প্রথম বিবাহবার্ষিকী আজ। তাদের তো দিল্লী থেকে আসার সময়ই হবে না। তা শুনলাম ছেলে বউমাকে নতুন শাড়ী উপহার দিয়েছে। বউমাও অবশ্য ছেলেকে কি একটা নতুন প্যান্ট কিনে দিয়েছে। কি আজকাল জিন না কি হয় না তাই। আমরা বাবা বুড়ো মানুষ। এতবছর বিয়ে হয়েছে, তোমাদের কাকু কোনদিন আমাকে বিবাহবার্ষিকী বলে কিছুই দিলেন না... আর আজকালকার... "

কথা শুনতে শুনতেই মলয়বাবু মনে মনে ঠিক করে নিয়েছিলেন পারমিতাকে কিছু একটা কিনে দেবেন বিবাহবার্ষিকীতে। কি কিনবেন সেটাও ঠিক করে রেখেছিলেন। তাদের অভাবের সংসার। খাওয়া পরার খুব একটা অসুবিধা হয়না ঠিকই, কিন্তু একটু যে বিলাসিতা করবেন, সে জো নেই। বিয়ের পর থেকেই পারমিতা সেই এক হাতে একটি বালা পরে থাকেন। আর এক হাত খালি থাকে। কবে থেকে ভাবছেন আর এক হাতের আর একটি বালা কিনে দেবেন, কিন্তু সে আর হয়ে ওঠে না। এইবার বিবাহবার্ষিকীতে তাঁকে একটা বালা কিনে দেবেন বলে শ্যাকরার কাছে দাম জেনেও এসেছেন মলয়বাবু। কিঞ্চিৎ দামী। সে যাকগে, বিবাহবার্ষিকীর আগের মাসে একটা এরিয়ার পাওয়ার কথা। পেলে কেনাটা কোন ব্যাপার না।

কিন্তু মানুষ ভাবে এক, হয় আর এক। কোন এক কারণে এরিয়ারটি ক্যান্সেল হয়ে গেল। মলয়বাবুর মাথায় হাত। জমানো টাকা সেরকম নেই যে বালাটা কিনতে পারবেন। বিয়ের এক বছর আগেই চাকরিটা পেয়েছেন। আর এত ধার দেনা করে বিয়ে করতে হয়েছে, যে জমানো শুরুই হয়েছে অনেক পরে। একদিন অফিসের ক্যান্টিনে বসে এসব ভাবছিলেন এই সময় সহকর্মী বিনয়বাবু তাঁকে ডাকেন --

"এই মলয়, কটা বাজে রে? আমার ঘড়িটা গেছে।"

ঘড়ি, তাই তো!! এটা তো ভেবে দেখেননি মলয়বাবু। তাঁর পৈতৃক সূত্রে পাওয়া একটা দামী ঘড়ি আছে বটে। অফিসের রাকেশ তেওয়ারি এসব এন্টিক নিয়ে উৎসাহী। একদিন তাঁর ঘড়িটা দেখে বলেছিলেন  --

"এটা বেচে দিন মলয়বাবু, প্রচুর দাম পাবেন। কি হবে এই পুরনো ঘড়ি পরে? দেখতেও তো কেমন হয়ে গেছে? "

কথাটা যে মিথ্যা তাও না। ঘড়ির স্ট্র্যাপ্টা শতজীর্ণ। কবে থেকে ভাবছেন ওটা পালটাবেন, কিন্তু ঐ, পয়সা কোথায়? তবে পৈত্রিক স্মৃতি তাই ছাড়তে পারেননি। মনে আছে উচ্চমাধ্যমিক পাশ করার পর তাঁর বাবা নিজের হাত থেকে ঘড়িটি খুলে দেন।

ট্রেনের জানালা দিয়ে চায়ের ভাঁড়টা বাইরে ফেলে নিজের খালি হাতের দিকে তাকালেন মলয়বাবু। তারপরই ব্যাগের উপর দিয়ে শ্যাকরার দোকানের বাক্সটা অনুভব করলেন।

স্টেশন থেকে বেড়িয়ে নিজের সাইকেলটা স্ট্যান্ড থেকে নিলেন মলয়বাবু। এবার রওয়ানা হলেন বাড়ির দিকে। আজ যেন মনটা নিজের থেকেই ভালো লাগছে। জি টি রোড পার হয়ে নটরাজ সিনেমার সামনে দিয়ে যেতে গিয়ে থামলেন একবার। সামনেই মিষ্টির দোকানে সিঙ্গারা ভাজছে। নিয়ে যাবেন? না থাক, বালাটা যদি কোন কারণে খোয়া যায় এই করতে গিয়ে। আবার সাইকেলের প্যাডেলে পা দিলেন।

যখন রোলের দোকানের চাটুতে প্রথম তেল পড়ল, তুলসীতলায় শঙ্খের ধ্বনি শোনা গেল, খেলা শেষে ছেলের দল মাঠ থেকে উইকেট তুলল,  মফঃস্বলে সন্ধ্যা নামল,  মলয়বাবু বাড়ি ফিরলেন। সাইকেলটা রেখে কলতলায় পা ধুয়ে নিলেন। পারমিতা গামছাটা বাড়িয়ে দিয়ে বললেন

-- "ট্রেন ঠিক ছিল? তুমি যাও আমি মুড়ি নিয়ে আসছি।"

ঘরে বসে ব্যাগ থেকে আস্তে আস্তে বাক্সটা বার করে সবে বালাটা দেখবেন, এই সময় লোডশেডিং। অন্ধকারে কিছুই দেখা যায় না। মলয়বাবু আলতো করে হাত বোলালেন বালাটার উপরে। এই সময় লণ্ঠন ও বাটি ভর্তি মুড়ি নিয়ে ঘরে ঢুকলেন পারমিতা।

"দাঁড়াও চা বসাচ্ছি।"
"শোন না একবার, একটা জিনিস দেখাই।"
"ওহ, দাঁড়াও, তবে আমি আগে দেখাই।"

এক ছুটে বেরিয়ে গেলেন পারমিতা। একটু বাদেই ঘরে ঢুকলেন হাতে একটা ছোট বাক্স। বাক্স খুলতেই লণ্ঠনের আলোয় মলয়বাবু দেখতে পেলেন এক জোড়া ঘড়ির ব্যান্ড। বাদামী চামড়ার ব্যান্ড। উপরে কাটা-কাটা ডিজাইন করা। ধারে সেলাই। লণ্ঠনের  আলোতেও চকচক করছে। একটা অদ্ভুত নতুন রকমের গন্ধও পেলেন তিনি।

"দেখি তোমার ঘড়িটা দাও, আমি লাগিয়ে দি।"

এতক্ষণ বোধহয় অন্ধকারে বুঝতে পারেননি পারমিতা।

"একি, তোমার ঘড়ি কই?"

এবার বালার বাক্সটা এগিয়ে দিলেন মলয়বাবু। ততক্ষণ তিনি দেখে নিয়েছেন, পারমিতার দু হাত খালি। এই অন্ধকারের মধ্যে যে ক্ষুদ্র নাটিকাটি অভিনীত হল, তা যেন সেই আলতামিরার গুহামানবদের সময় থেকে যুগ যুগ ধরে হয়েই চলেছে। হয়ত একেই বলে ভালোবাসা।