Wednesday, May 4, 2016

ছেলে গেছে পড়তে

ছেলে গেছে পড়তে, সেই দূর শহরে,
গ্রামের আলের পথ ধরে,
নদীর পার দিয়ে পাঁচ ক্রোশ পথ হেঁটে গেলে
পঞ্চায়তের তৈরি পিচ ঢালা রাস্তা।
দিনে দু'বার বাস যায় স্টেশনের দিকে -
ট্রেনে করে কলকাতা, সেও কম করে আড়াই ঘন্টা।
তারপর বাসে চড়ে ঘন্টাখানেকের পথ,
একটা সরুগলিতে দোতলা বাড়ির একতলায়
চার বন্ধু মেস করে থাকে।
ঘুপচি ঘরে না ঢোকে সূর্যের আলো,
না আসে একটু বাতাস।
তবু তার মধ্যে হাত পুড়িয়ে সকালে ভাত আর
আলুসিদ্ধ; বিকেলে একটু ডাল বড়জোর।
কেই বা বাসনমাজা, রান্নার ঝক্কি পোহায়?
খরচাও তো অনেক।

আসলে গ্রামের সকলে বলল,
এত ভালো রেজাল্ট, এত বড় সুযোগ -
চার বছর কষ্ট করলেই বিরাট চাকরি।
চাকরি এখানেও ছিল না তা নয়!!
পঞ্চায়েতকে বললেই প্রাইমারী ইস্কুলে --
মায়ে ছেলে দিব্যি চলে যেত।
তবু, ঐ যে "গ্রামের সকলে বলল" -
এই পাসটা দিতেই হয়।


রোজ সন্ধ্যাবেলা তুলসীতলায় প্রদীপ জ্বালিয়ে
মা আকাশপানে প্রার্থনা করেন।
সারাদিন এধার ওধার করে কেটে যায়,
কাটে না সন্ধ্যার পর, একটানা ঝিঁঝিপোকার শব্দ।
তারপর অনেকরাত্রে ঘুম আসেনা যখন,
জানালার ধারে চাঁদমাখা মাঠটার দিকে
তাকিয়ে ভাবেন --
"মোচার ঘন্ট আর পোস্তর বড়া
কি ভালোই না বাসত।"
তখন তিন বন্ধুকে ঘুমন্ত দেখে
ছাতে পায়চারি করে যায় একটি উনিশবছর
আর গুনগুন করে মুখস্ত বলে সন্ধ্যার পড়া।

পশ্চিমের আকাশে হেলে পরা চাঁদ
মুচকি হেসে মজা করে।
একবার দেখে মাকে,
আর একবার ছেলেকে, প্রতীক্ষায় আছে লড়াইয়ের।
আসলে চাঁদই মিলিয়ে দেয় দু'জনের প্রতীক্ষার,
মানুষের সঙ্গে মানুষের বন্ধনের সুতো।



~~~ সুকল্যাণ বসু (মে ২০০৮)