Wednesday, December 19, 2018

নয়ের দশকের গল্প

"দাদু, তুমি তাজমহল দেখেছো?"
"হ্যাঁ দাদু।"
"খুব সুন্দর ছিল তাই না?"
"হ্যাঁ দাদু, আমার  তখন  দশ বছর বয়স। মা-বাবার সঙ্গে গিয়েছিলাম।"
"তাজমহল ভেঙ্গে গেল কেন দাদু? স্কুলে বলেছে সাইবার যুদ্ধে। সাইবার যুদ্ধ কী দাদু?"
"তুমি বড়  হও তখন পড়বে।"
"না দাদু, তুমি বল।"
"না দাদু, তোমার স্কুলে পড়বে।"

সেদিন রাত্রে আর কথা বাড়াল না  মানিক। খেতে খেতে বার বার অন্যমনস্ক হয়ে পড়ছিলেন তুষারবাবু। সাইবার যুদ্ধ। এই খাওয়ার টেবিলে একমাত্র তিনি দেখেছেন সেই যুদ্ধ। তিনি জানেন ঐ দুঃস্বপ্নের  দিনগুলির কথা। এবং তিনি জানেন যুদ্ধ পরবর্তী অবস্থা। আজ এত বছর তিনি গৃহবন্দী।

পরদিন সকালে অভ্যাস মত বারান্দায় বসে চা খাচ্ছিলেন তুষারবাবু।  হাল্কা ঠাণ্ডা পড়েছে এই মফঃস্বল শহরে। তাই একটা শাল জড়িয়েছেন। "দুধ" ডাক শুনে বারান্দার দড়িটা টেনে দুধ তুলে নিলেন।

"বউমা, এই যে দুধ।"
"হ্যাঁ বাবা, টেবিলে রেখে দিন।"
"আজ কি তুহিনের অফিস নেই? এখনো বাড়িতে দেখছি। রোজ তো সকাল সাতটায় বেরিয়ে যায়।"
"না বাবা, আজ বাবুর স্কুলে  আমাদের ডেকেছে।"
"সেকি? বাবু কি কোন দুষ্টুমি করল নাকি? ও তো নিপাট ভালোছেলে।"
"তা  নয় বাবা,  আজ থেকে ওদের ইন্টারনেট পড়ানোর কথা ইতিহাস ক্লাসে।"
"ওহ।"
"বাবা, গত  সপ্তাহে প্রিন্সিপাল আমাকে ডেকেছিলেন। আমি স্কুলের শিক্ষিকা বলে আগে থেকেই বলে রেখেছেন।"
"কী?"
"আপনার ব্যাপারে সাবধান করে দিয়েছেন।"
"আমার ব্যাপারে?" 
"হ্যাঁ বাবা, আপনার ব্যাপারে।  আপনি দয়া করে বাবুকে ইন্টারনেট নিয়ে ভুল কিছু শেখাবেন না।"
"ভুল?"
"হ্যাঁ বাবা, সারা দেশ জানে আপনি ইন্টারনেট বন্ধ করার বিরুদ্ধে ছিলেন। ভারতবর্ষের প্রো-ইন্টারনেট দলের সবচেয়ে বড় নেতা ছিলেন আপনি। "
"কিন্তু..."
"আপনি তো জানেন বাবা, কত কষ্ট করে আপনাকে জেল থেকে বার করে এনেছি আমরা। সেই কারণেই আপনি আজকেও গৃহবন্দী। "
"কিন্তু বউমা, আমি ভুল কি বলব?"
"ঐ  যে আপনার সে যুগের গল্প, ফেসবুক, গুগল আরও কিসব।" 
"কিন্তু সেগুলি  তো বাস্তব বউমা।  আমাদের সময় কিছু দরকার পড়লে এক সেকেন্ডে আমরা স্মার্টফোনে দেখে  নিতাম। কত বন্ধুদের সঙ্গে যোগাযোগ থাকত..."
"তাতে লাভটা  কি হল বাবা? আপনার সেই বন্ধুদের কতজন বেঁচে?  আজ দিল্লী শহরটায় শুধু ভগ্নাবশেষ পড়ে আছে।  তাজমহল নেই। পৃথিবীর জনসংখ্যা  অর্ধেক হয়ে গিয়েছিল সেই সাইবার যুদ্ধে। কি লাভ হল আপনাদের ফেসবুক আর ইমেলে।"
"তাই  বলে ওদের  স্কুলে শেখায় ইন্টারনেট কত খারাপ, মানুষ পাগল  হয়ে ইন্টারনেট আবিষ্কার করেছিল। এগুলি কি ঠিক বউমা?"
"হ্যাঁ বাবা, এগুলি ঠিক। ইতিহাস তাই  বলে। সেদিন ইন্টারনেট বন্ধ হয়েছিল  বলেই  আমরা আজ সবাই  বেঁচে আছি।"
"তুমি যা বলবে বউমা, ইতিহাস শুধু বিজয়ীরাই লেখে।"



সেদিন বিকেলে স্কুল থেকে ফিরে  মানিক চলে এল দাদুর ঘরে।

"দাদু,  দাদু, তুমি ইন্টারনেট দেখেছ?"
"হ্যাঁ  দাদু, দেখেছি।"
"খুব খারাপ, তাই না দাদু?  ঐ ইন্টারনেটের জন্যই কত লোক মারা গেছে।"
"হ্যাঁ দাদু, খুব খারাপ।"




Friday, December 7, 2018

দন্ত চিকিৎসা

আজকাল কারুর সাথে কথা বলতেই ভয় করে। কে যে কী ভাবে বলা শক্ত। যেমন ক'দিন আগে দেখলাম তথাকথিত নাস্তিকরা রেগে গেছেন কেন কোন এক মন্দিরে  মেয়েদের ঢুকতে দেওয়া হবেনা। আরে এতে রেগে যাওয়ার কি  আছে? বরং মহিলাদের খুশী হওয়া উচিত। যদি বলত হাসপাতালে ঢুকতে দেবে না, স্কুলে ঢুকতে  দেবে না, সিনেমা হলে ঢুকতে দেবেনা, আই পি এলে ঢুকতে দেবে না,  কে হবে বাংলার কোটিপতিতে ঢুকতে দেবে না, তাহলে নাহয় রেগে যাওয়ার মানে আছে। যাই হোক, মেনে নিলাম আমি কিছুই বুঝিনা। আবার দেখলাম কয়েকদিন আগে তথাকথিত ফ্রি মার্কেটের প্রবক্তারা রেগে গেছেন কেন পুজোর সময় ব্যাঙ্গালোর কলিকাতা  প্লেন ভাড়া পনেরো হাজার টাকা। কে জানে বাপু, আমি বোধহয় এসব ফ্রি মার্কেট বুঝিনা।

এই  কারণে আজকাল কথা বলতে ভয় করে। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে লোকে কথা বলতে চায়। যেমন সেদিন গিয়েছি  আমার  দন্তচিকিৎসকের কাছে। তিনি জাতে পারস্যদেশের। অনর্গল বকে চলেন আমার  দাঁত পরিষ্কার করতে গিয়ে। এবার বেশিরভাগই  এরকম সব প্রসঙ্গ, যেগুলোর মানে আমি নিজেই  জানি না। আজকাল ঠিক করেছি তিনটি বিষয় আছে যা নিয়ে বললে সবাই একমত  হয়। খাওয়া, সিনেমা আর বেহালার জ্যাম। তবে পারস্যদেশের মানুষকে বেহালার জ্যাম নিয়ে বললে তিনি বোধহয় রেগেই যাবেন। তাই শুরু করলাম খাওয়া নিয়ে। তিনি তাতে উৎসাহ দেখালেন না। এবার চলে গেলাম সিনেমায় -- বললাম বেশ কিছু ভালো পারস্য সিনেমা দেখেছি। যেমন বাচ্চা-এ-আসমান, অফসাইড। ভদ্রলোক কি বুঝলেন জানি না, আমাকে বলে বসলেন "আমিও  অনেক ইন্ডিয়ান সিনেমা  দেখেছি।"

আমি  জানতে চাইলাম কি কি?

উত্তর  এলো  আওয়ারা, শোলে আর জিমি হাজা।

শেষেরটার নাম আমি শুনিনি বলায় ভদ্রলোক অবাক হলেন । ইংরেজিতে  বললেন -- "তুমি  জানোনা ভারতের  সবচেয়ে সুন্দর অভিনেতা মিঠুন চক্রবর্তীকে? আমার বাড়িতে ওনার একটা পোস্টার আছে।"

ছয়মাস বাদে আবার দাঁত পরিষ্কার করাতে যাব। কি নিয়ে কথা বলব এবার সেটা ভাবতে হবে।  ভাবছি বলব তেহরানে কি জ্যাম হয়?