Monday, August 19, 2019

সান ফ্রান্সিস্কো

অফিসের কাজে সান ফ্রান্সিস্কো এসেছি। চমৎকার শহর।  এক সঙ্গে পাহাড়, সমুদ্র, সবই আছে। যদিও  গরমকাল, একটু  একটু হাল্কা ঠাণ্ডা হাওয়া দিচ্ছে। একটা ছাই  রঙের হুডি কিনে নিলাম। হোটেলে চেক ইন করেই বেড়িয়ে পড়েছি। পিয়ার ৩৯-এর দিকে হাঁটছি, এমন সময় এক বুড়ো ধরল আমাকে রাস্তায়।

"ম্যাজিক না দেখতে চাইলে  একটা ডলার দাও।"

এতো ভারী মজা। লোকে ম্যাজিক দেখিয়ে টাকা চায়।  এ ম্যাজিক না দেখিয়ে টাকা চাইছে?

"খুচরো নেই।"

এই অবস্থায় আমার প্রিয় ডায়লগটা আউড়ে নিলাম।

"বেশ তবে ম্যাজিক দেখ।"

বলে হাসতে হাসতে চলে গেল লোকটা। কোথায় ম্যাজিক? কিছুই দেখাল না। অদ্ভুত তো। যাকগে। আমি হাঁটতে  লাগলাম। পিয়ার ৩৯-এ পৌঁছে একটু সমুদ্রের ধারে দাঁড়িয়ে রইলাম। এখন সূর্যাস্ত হতে চলেছে। সেই আলোয় আলোকিত গোল্ডেন গেট ব্রিজ এক অপরূপ মায়াবী চিত্র উপহার দিচ্ছে। এই  দৃশ্য যেন ম্যাজিক।  আর সামনে দাঁড়িয়ে সেই আল্কাট্রাজ দ্বীপ। যেখান থেকে কোন কয়েদী পালাতে পারত না। সূর্যাস্ত  দেখে একটা ক্রেপের দোকান থেকে ডিম ও বেকন দেওয়া ক্রেপ খেলাম।

এবার হেঁটে চললাম আমার হোটেলের দিকে। কাল  সকালে অফিসে কাজ আছে। রাতে একটু পড়াশুনো করব। আমার হোটেলের নাম হোটেল  প্যাসিফিক  ওয়ে। হোটেলে ঢুকতে গিয়ে পকেটে হাট দিয়ে বুঝলাম ঘরের চাবি ঘরেই ফেলে এসেছি।  নিজের মনের ভুলে নিজেরই হাসি পেল। যাই রিসেপ্সনে বলি। ভাগ্যিস পাসপোর্টটা পকেটে আছে। রিসেপসনে বলতেই ছেলেটি এক গাল হেসে বলল  --

"সার্টেনলি স্যার। আপনার নাম আর রুম নাম্বারটা বলুন?"
"নাম প্রকাশ সেনগুপ্ত। রুম নাম্বার ৪৬৭।"
"না স্যার আপনার কিছু ভুল হচ্ছে। আমাদের হোটেলে ৪৬৭ নম্বর রুম নেই। প্রত্যেকটি ফ্লোরে ৫০টি করে ঘর।"
"আমার স্পষ্ট মনে আছে ৪৬৭।"
"স্যার, আপনি ভুল হোটেলে আসেননি তো?"
"না। এটা হোটেল প্যাসিফিক ওয়ে তো?"
"হ্যাঁ স্যার। আচ্ছা আপনার নামটা আবার বলুন।"
"প্রকাশ সেনগুপ্ত।"
"না স্যার, ঐ নামে আমাদের কোন গেস্ট নেই আজকে। আপনার স্যার হোটেল  ভুল হয়েছে। "
"কী যা তা বলছেন!! বলছি আমি এই ঘণ্টা খানেক আগেই এখানে চেক ইন করেছি। আমার  পাসপোর্ট আপনারা ফটোকপি করে রাখলেন"
"না স্যার,  আমাদের ডিরেক্টরি তে কিচ্ছু দেখাচ্ছে না। আচ্ছা, এক কাজ করুন, আপনার  পাসপোর্টটা একবার দেবেন? হয়ত আমি নামের বানান ভুল লিখছি।"
"হ্যাঁ এই নিন।"
"থ্যাঙ্ক ইউ স্যার। হ্যাঁ স্যার, এবার পেয়েছি। আপনার রুম নাম্বার ২৩১। এই নিন স্যার রুমের  চাবি। আর আপনার নাম প্রকাশ সেনগুপ্ত বললেন কেন? আপনার নাম তো সুজয় সেন।"
"কী বলছেন!!! আমার নাম আমি ভুল বলব?"
"আপনার পাসপোর্ট দেখুন স্যার। গুড নাইট স্যার। ড্রিঙ্ক রেসপন্সিব্লি।"

পাসপোর্ট দেখে চক্ষু চড়কগাছ।  তাই তো। আমার পাসপোর্টে আমার নাম সুজয় সেন।  ছবিটাও আমার না। কিন্তু ততক্ষণে আমার যা বোঝার বোঝা হয়ে গেছে। ছেলেটিকে ধন্যবাদ জানিয়ে ঘরে এলাম। না এই ঘর আমার  চেনা না। ঘরের এক ধারে যা লাগেজ আছে সেগুলি আমি কোনদিন দেখিনি।  এক ছুটে বাথরুমে।  আলো  জ্বালিয়ে আয়নায় তাকালাম। হুবহু পাসপোর্টের চেহারা।

এক ডলার দিয়ে দিলেই হত।