Friday, December 30, 2016

তারাবাগ রহস্য

                                   ।।১।।
বাইরের ঘরের সোফাতে বসে একটা বই পড়ছিল অপু ডোরবেল বাজতে উঠে গিয়ে দরজা খুলতেই দেখে সামনে দাঁড়িয়ে সুভাষবাবু
আসুন এত দেরি হল আমি তো ভেবেছিলাম সন্ধ্যেবেলা আসবেন
সেরকমই তো ইচ্ছে ছিল হে অপু কিন্তু বুঝতেই পার, আমাদের কাজ যাকগে, টা বাজে তো? খেয়ে নেওয়া যাক নাকি?”
ঠিক আছে, তাই হবে আপনি বসুন, আমি ভাত বারি
বেশি কিছু রান্না করোনি তো?”
নাহ, তেমন কিছু না আপনি তো বলেছিলেন শুধু মাংস করতে
হ্যাঁ, পাঁঠা তো?”
নিশ্চয়
বেশ, চল খাওয়া যাক
এনারা যতক্ষণ খাওয়া দাওয়া করে, আমরা বরং এদের ব্যাপারে জেনে নিই
সুভাষবাবু বর্ধমানের এস আই আর পাঁচ বছর বাদে অবসর নেবেন সে তুলনায় অপু বাচ্চা ছেলে সত্যি কথা বলতে কি, সুভাষবাবুর মেয়ের চেয়ে অপু মাত্র ছয় বছরের বড় সুভাষবাবুর মেয়ে ছন্দা মার্কিন দেশে পড়তে গেছে সুভাষবাবু বিপত্নীক অপুর সঙ্গে সুভাষবাবুর আলাপ এক বছর আগে অপু বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজীর অধ্যাপক বছর তিনেক আগে বিশ্বভারতী থেকে পড়াশুনা শেষ করে বর্ধমানে আসে অপু। গতবছর বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে একটি খুনের রহস্য উদ্ধার করতে সুভাষবাবুকে সাহায্য করে অপু সেই থেকে এই অসমবয়সের বন্ধুত্ব মাসে একবার করে অপুর বাড়িতে নৈশভোজে আসেন সুভাষবাবু। তার আর একটা কারণ অবশ্য অপুর রান্না। অকৃতদার অপু নিজেই রান্না করে খায়, এবং অসম্ভব ভালো রান্না করে। অপুর রান্নার লোভেই ইউরিক এসিডের আদেশ অমান্য করেও তাই আজ মাংস খেতে এসেছেন সুভাষবাবু।
“চলুন বারান্দায় বসা যাক।“
খাওয়া শেষ হলে সুভাষবাবুকে ডাকে অপু।
“না হে, আজ একটু হাঁটতে যাই চল।“
“হাঁটতে যাবেন?”
“হ্যাঁ, তোমার হাতের মাংস; লোভে পড়ে অনেকটাই খেয়ে ফেললাম। একটু হাঁটলে হজম হবে।“
“চলুন তাহলে। দাঁড়ান, চাবিটা নিয়ে নি।“
তারাবাগ শিক্ষক আবাসন অনেকগুলি ব্লকে বিভক্ত। প্রতিটি ব্লকে ছটি করে ফ্ল্যাট। এক একটি ব্লক তিন তলা, তাই প্রতি তলায় দুটি করে ফ্ল্যাট। অপু থাকে ডি ব্লকের ৪ নম্বর ফ্ল্যাটে। দোতলায় পুবদিক্মুখী এই ফ্ল্যাট। বারান্দায় বসলে সামনে তারাবাগ মাঠ পরিষ্কার দেখা যায়।
বাড়িতে তালা দিয়ে সুভাষবাবুর সঙ্গে নিচে এল অপু। ব্লকের সামনে লাল সুড়কির রাস্তা। রাত হয়েছে। ব্লকের গেটের বাইরের বাতি ছাড়া আর কোন আলো নেই। তাই সামনেটা অন্ধকার বলাই চলে। সুভাষবাবু টর্চ জ্বালালেন।
“সাবধানে এস অপু।“
সুড়কির রাস্তা দিয়ে কয়েক সেকেন্ড হাঁটলেই সামনে পিচের রাস্তা। রাস্তার উল্টোদিকে তারাবাগ মাঠ। মাঠের মাঝেই পাম্প হাউস। পাম্প হাউসটা যেন মাঠটাকে দু ভাগে ভাগ করে রেখেছে। পাম্প হাউসের বাঁ দিকে খোলা মাঠ, দু ধারে শুধু দুটি গোলপোস্ট। অবশ্য ক্রিকেট খেলে খেলে মাঠের মাঝে একটি ঘাস বিহিন পিচের উদয় হয়েছে। পাম্প হাউসের ডান দিকে দুটি কাঠের বেঞ্চি। লোহার বেস। তার সামনে বাচ্চাদের খেলার জায়গা। স্লিপ, ঢেঁকি, ইত্যাদি আছে। মাঠের একদম দক্ষিণপ্রান্তে কিছু গাছ ও তারাবাগের তারের বেড়া।
            পিচ রাস্তায় উঠে বাঁ দিকে হাঁটা শুরু করল অপু ও সুভাষবাবু। রাত হয়েছে, রাস্তার আলো জ্বললেও তারাবাগের মাঠটি যেন অন্ধকারে ঢাকা। এক অদ্ভুত মায়াবী পরিবেশ তৈরি হয়েছে।
            “মাঠটা কেমন অন্ধকারে ঢেকে আছে দেখুন। কোন অপিরিচিত লোক এলে ভূতের ভয় পেতেই পারে।“
            “হুম। অন্ধকার ও রহস্য। এই তারাবাগের মাঠে কম রহস্য নেই অপু।“
            “মানে?”
            “আজ থেকে তিরিশ বছর আগে এই তারাবাগের মাঠে এক নৃশংস খুন হয়েছিল, যার খুনী কে আজও আমি জানি না।“
            “সেকি। এটা তো জানতাম না।“
            “তুমি আর কতটুকু জানো। ক’দিনই বা এসেছ এই পাড়ায়।“
            “বেশ। খুলে বলুন। হাঁটতে হাঁটতে শোনা যাক।“