Saturday, September 19, 2015

তারাবাগ ডাইরিজ ২ ঃ আমার পুজো

শরৎকাল এলেই আমার ছোটবেলার পুজোর দিনগুলির কথা মনে পরে যায়। বর্ধমানে বড় হয়েছি, থাকতাম University Teachers' quarters তারাবাগে। আমার পুজোতে ঠাকুর দেখা বা জামাকাপড় কিনতে যাওয়া তেমন ছিল না। অনেকটাই ঘরকুনো, বা ঠিক ভাবে বলতে গেলে পাড়াকুনো পুজো হত। সকালবেলা ঘুম থেকে উঠেই দেখতাম মা বেড়িয়ে গেছেন অঞ্জলি দিতে বা পুজোর জোগাড় করতে। অর্থাৎ লুচি নয়, জলখাবার হচ্ছে পাউরুটি আর ডিম সিদ্ধ, খুব একটা আপত্তি থাকত না। কারণ তারপর শুরু হত টানা ৩-৪ ঘণ্টার ক্রিকেট। খুব ছোটবেলা থেকেই নাস্তিক বলে কোনদিন পুজোয় অঞ্জলি দেয়ার কথা মাথায় আনিনি। দুপুরবেলা এসে পূজাবার্ষিকী আনন্দমেলা বা শুকতারা নিয়ে বসা। কাকাবাবু, বাবলু বা ফ্রান্সিস -এর সঙ্গে দুপুরটা কেটে যেত। বিকেল হলে দূরদর্শনের পরদায় পূজা পরিক্রমা দেখা। কলকাতা বা অন্যান্য জেলার বিভিন্ন মণ্ডপের পুজো টিভিতেই দেখতাম। সন্ধ্যে হলেই আমাদের পাড়ার প্যান্ডেলে চলে যেতাম। প্রসাদ খাওয়ার পর শুরু হত সাংস্কতিক অনুষ্ঠান। কোনদিন পাড়ার ছেলেরা মিলে নাটক করল, বা মেয়েরা নাচ/গান এর আয়োজন করল। কোনদিন বাইরে থেকে কোন magician এলেন। আবার কোনদিন পরদা ফেলে দেখান হত "Born Free" (এটা নিয়ে আমার ঘোর আপত্তি থাকত, কারণ প্রতিবারি ওই একিই সিনেমা দেখান হত)।
     কোন কোন বার পুজোর সময় বাড়ির বাইরে ঘুরতে যাওয়া হত। একবার মনে আছে শঙ্করপুর গিয়েছিলাম। বাবা কিন্তু চাইতেন দশমীর দিন তারাবাগে থাকতে। দশমীর দিন ভ্যানে করে ঠাকুর নিয়ে সারা পাড়া ঘোরান হত। তারপর বিসর্জন ও লাড্ডু বিতরণ। বাবা ফিরে ঠাকুরমা আর ঠাকুরদার ছবিতে মালা দিতেন। দুজনের কাউকেই আমি কোনদিন দেখিনি। ঠাকুমা চলে গেছেন যখন বাবার ২ বছর বয়স, আর ঠাকুরদা যখন বাবার বয়স ১০। একবার দেখেছিলাম দশমীর পর বাবা একা ঘরে চুপ করে ঠাকুমার ছবির দিকে তাকিয়ে আছেন । জানি না, ঠিক এই কারণেই কি বাঙ্গালি বার বার শারদোৎসব করে?

1 comment:

  1. অসাধারণ... বেশ সুন্দর পার্সোনাল সিরিজ হচ্ছে এটা।

    ReplyDelete