-- না পুলিনবাবু, আপনাকে রাগ কমাতে হবে। নাহলে আপনার প্রেশার কমবে না।
-- কিন্তু আমি তো রাগ করিনা।
-- কেন মিছে কথা বলছেন বলুন তো? আপনার স্ত্রী, ছেলে, পাড়া-প্রতিবেশী সবাই জানে আপনার রাগের কথা। আচ্ছা, শেষ কবে রেগেছিলেন বলুন।
-- শেষ কবে? এই ধরুন আজ সকালে ক্রিকেট দেখতে গিয়ে?
-- কেন? কারেন্ট গেছিল?
-- না না, এই দেখুন না শচীনটা ৯৩ এ ব্যাট করছিল, দিল ওকে রান আউট করে। রাগ হবে না বলুন?
-- না হবে না। আপনার কি মশাই শচীনের ১০০- র সাথে? ও ১০০ করলে কি আপনার আয়ু বাড়বে? দেখুন আপনার বয়স হয়েছে। রিটায়ার করেছেন। এবার এসব রাগ থামান। রাগ হলেই মনে করবেন এই রাগ করে কি আপনার আয়ু বাড়বে? বুঝেছেন?
-- হ্যাঁ ডাক্তারবাবু।
ডাক্তারখানা থেকে বেরিয়ে রিক্সা ধরলেন পুলিনবাবু।
-- কত ভাড়া নেবে?
-- সাড়ে ছয় টাকা দেবেন।
পুলিনবাবু জানেন পাঁচ টাকা ভাড়া। খানিকক্ষণ আগেও সেই ভাড়াতেই এসেছেন। তবে আজ তিনি রাগ করবেন না।
-- কেন বাবা, পাঁচ তাকাই তো ভাড়া।
-- সাড়ে ছয়ের নিচে যাব না। যেতে হলে উঠুন নইলে ছাড়ুন।
মনের মধ্যে রিক্সাওয়ালাকে দুটো গালাগাল দিলেন পুলিনবাবু। কিন্তু না, দেড় টাকার চেয়ে বেঁচে থাকা জরুরী।
-- ঠিক আছে চল।
পরদিন সকালে চা খেয়ে কাগজের জন্য অপেক্ষা করছেন পুলিনবাবু। কলকাতা থেকে কাগজ আসতে আসতে সাতটা বেজে যায়।
-- কি গো। হাঁ করে বসে থাকবে নাকি? আমি কি আঙুল কেটে রান্না করব?
গিন্নীর ধমকে চমকে উঠলেন পুলিনবাবু। বলতে যাচ্ছিলেন তাই কর, কিন্তু না, রাগ করবেন না তিনি।
-- যাচ্ছি, যাচ্ছি, এই কাগজটা আসুক।
-- তাহলে কাগজই খেয়ো।
অগত্যা থলে নিয়ে বাজারে বেরোলেন। বাজারে হরেন মাছওয়ালা বরফের রুইকে "টাটকা, জ্যান্ত" বলে চালাচ্ছিল। অন্যদিন হলে মিনিট পাঁচেক ঝগড়া করে যান। আজ ও পথ মাড়ালেন না পুলিনবাবু। মাছ টাটকা থাকার চেয়ে তাঁর বেঁচে থাকা জরুরী।
বাড়ি ফেরার বেশ খানিকক্ষণ বাদে, সাড়ে আটটা নাগাদ কাগজ এলো। কাগজওয়ালাকে ডাকলেন পুলিনবাবু
-- কি রে আজ এত দেরী?
-- তো আমি কি প্রেসে গিয়ে কাগজ ছাপাব?
নাহ, জলদি কাগজ পড়ার চেয়ে বেঁচে থাকা জরুরী।
একটু বাদে ছেলে বান্টি তাঁর ঘরে এলো।
-- বাবা, গোটা পঞ্চাশেক টাকা দাও তো।
-- কেন? এই তো সেদিন একশ নিলি।
-- গিটারটা খারাপ হয়েছে। সারাব।
-- আর কতদিন গিটার নিয়ে চালাবি বাবা? এবার একটা চাকরি বাকরি দেখ।
-- উফ, বাবা, তোমার মত আমিও ঐ দশটা- পাঁচটার কেরানীগিরি করে চালাতে পারব না। আমি আর্টিস্ট। জলদি টাকাটা ছাড়ো। আজ জ্যাম আছে আমাদের।
এই কথাটা কদিন আগে বললে ছেলের গালে চড় পড়ত। আজ সামলে নিলেন। চড় মারার চেয়ে বেঁচে থাকা জরুরী।
-- আজ টাকা নেই। পরে আসিস।
-- তুমিও না বাবা। তোমার মত বাবা থাকলে ডিলান ডিলান হত না।
বিকেলে বাড়িতে হাজির হল পুলিনবাবুর মেয়ে শম্পা। সঙ্গে শম্পার ছেলে সানি। শম্পার শ্বশুরবাড়ি কলকাতায়। মাস দু-তিন অন্তর আসে বাবা মায়ের কাছে। অন্যসময় জামাই সত্যব্রতও আসে। এবার জামাই ছুটি পায়নি।
শম্পাদের দেখে খুশীতে ভরে উঠল পুলিনবাবুর মুখ। সানিকে কোলে নিয়ে বারান্দায় গেলেন খেলা করতে।
-- বল তো দাদুভাই, আমি কে?
-- দাদু রাগী।
-- ঠিক করে বল দাদুভাই, আমি কে?
-- তুমি রাগী দাদু।
আসলে হয়েছে কি সানি ভীষণ দুষ্টু। শম্পা তাই রাস্তায় বলতে বলতে এসেছে
-- দাদু কিন্তু ভীষণ রাগী। একদম দুষ্টু করবে না ওখানে গিয়ে।
এবার একটু বিরক্ত হয়ে পুলিনবাবু আবার বললেন
-- না দাদুভাই, আমি রাগী নই। আমি তো তোমার দাদু।
-- না, তুমি রাগী। রাগী দাদু।
এভাবে বার দশেক চলার পর আর সহ্য করতে পারলেন না পুলিনবাবু।
-- কি? আমি রাগী? সারাদিন রাগ চেপে আছি। আর আমি রাগী!!!
তাঁর চিৎকারে বারান্দায় ছুটে এল শম্পা।
-- সানি, আবার বাঁদরামো করেছিস? কতবার বলেছি দাদু রাগী, দুষ্টু করিস না।
-- কিন্তু আমি তো রাগ করিনা।
-- কেন মিছে কথা বলছেন বলুন তো? আপনার স্ত্রী, ছেলে, পাড়া-প্রতিবেশী সবাই জানে আপনার রাগের কথা। আচ্ছা, শেষ কবে রেগেছিলেন বলুন।
-- শেষ কবে? এই ধরুন আজ সকালে ক্রিকেট দেখতে গিয়ে?
-- কেন? কারেন্ট গেছিল?
-- না না, এই দেখুন না শচীনটা ৯৩ এ ব্যাট করছিল, দিল ওকে রান আউট করে। রাগ হবে না বলুন?
-- না হবে না। আপনার কি মশাই শচীনের ১০০- র সাথে? ও ১০০ করলে কি আপনার আয়ু বাড়বে? দেখুন আপনার বয়স হয়েছে। রিটায়ার করেছেন। এবার এসব রাগ থামান। রাগ হলেই মনে করবেন এই রাগ করে কি আপনার আয়ু বাড়বে? বুঝেছেন?
-- হ্যাঁ ডাক্তারবাবু।
ডাক্তারখানা থেকে বেরিয়ে রিক্সা ধরলেন পুলিনবাবু।
-- কত ভাড়া নেবে?
-- সাড়ে ছয় টাকা দেবেন।
পুলিনবাবু জানেন পাঁচ টাকা ভাড়া। খানিকক্ষণ আগেও সেই ভাড়াতেই এসেছেন। তবে আজ তিনি রাগ করবেন না।
-- কেন বাবা, পাঁচ তাকাই তো ভাড়া।
-- সাড়ে ছয়ের নিচে যাব না। যেতে হলে উঠুন নইলে ছাড়ুন।
মনের মধ্যে রিক্সাওয়ালাকে দুটো গালাগাল দিলেন পুলিনবাবু। কিন্তু না, দেড় টাকার চেয়ে বেঁচে থাকা জরুরী।
-- ঠিক আছে চল।
পরদিন সকালে চা খেয়ে কাগজের জন্য অপেক্ষা করছেন পুলিনবাবু। কলকাতা থেকে কাগজ আসতে আসতে সাতটা বেজে যায়।
-- কি গো। হাঁ করে বসে থাকবে নাকি? আমি কি আঙুল কেটে রান্না করব?
গিন্নীর ধমকে চমকে উঠলেন পুলিনবাবু। বলতে যাচ্ছিলেন তাই কর, কিন্তু না, রাগ করবেন না তিনি।
-- যাচ্ছি, যাচ্ছি, এই কাগজটা আসুক।
-- তাহলে কাগজই খেয়ো।
অগত্যা থলে নিয়ে বাজারে বেরোলেন। বাজারে হরেন মাছওয়ালা বরফের রুইকে "টাটকা, জ্যান্ত" বলে চালাচ্ছিল। অন্যদিন হলে মিনিট পাঁচেক ঝগড়া করে যান। আজ ও পথ মাড়ালেন না পুলিনবাবু। মাছ টাটকা থাকার চেয়ে তাঁর বেঁচে থাকা জরুরী।
বাড়ি ফেরার বেশ খানিকক্ষণ বাদে, সাড়ে আটটা নাগাদ কাগজ এলো। কাগজওয়ালাকে ডাকলেন পুলিনবাবু
-- কি রে আজ এত দেরী?
-- তো আমি কি প্রেসে গিয়ে কাগজ ছাপাব?
নাহ, জলদি কাগজ পড়ার চেয়ে বেঁচে থাকা জরুরী।
একটু বাদে ছেলে বান্টি তাঁর ঘরে এলো।
-- বাবা, গোটা পঞ্চাশেক টাকা দাও তো।
-- কেন? এই তো সেদিন একশ নিলি।
-- গিটারটা খারাপ হয়েছে। সারাব।
-- আর কতদিন গিটার নিয়ে চালাবি বাবা? এবার একটা চাকরি বাকরি দেখ।
-- উফ, বাবা, তোমার মত আমিও ঐ দশটা- পাঁচটার কেরানীগিরি করে চালাতে পারব না। আমি আর্টিস্ট। জলদি টাকাটা ছাড়ো। আজ জ্যাম আছে আমাদের।
এই কথাটা কদিন আগে বললে ছেলের গালে চড় পড়ত। আজ সামলে নিলেন। চড় মারার চেয়ে বেঁচে থাকা জরুরী।
-- আজ টাকা নেই। পরে আসিস।
-- তুমিও না বাবা। তোমার মত বাবা থাকলে ডিলান ডিলান হত না।
বিকেলে বাড়িতে হাজির হল পুলিনবাবুর মেয়ে শম্পা। সঙ্গে শম্পার ছেলে সানি। শম্পার শ্বশুরবাড়ি কলকাতায়। মাস দু-তিন অন্তর আসে বাবা মায়ের কাছে। অন্যসময় জামাই সত্যব্রতও আসে। এবার জামাই ছুটি পায়নি।
শম্পাদের দেখে খুশীতে ভরে উঠল পুলিনবাবুর মুখ। সানিকে কোলে নিয়ে বারান্দায় গেলেন খেলা করতে।
-- বল তো দাদুভাই, আমি কে?
-- দাদু রাগী।
-- ঠিক করে বল দাদুভাই, আমি কে?
-- তুমি রাগী দাদু।
আসলে হয়েছে কি সানি ভীষণ দুষ্টু। শম্পা তাই রাস্তায় বলতে বলতে এসেছে
-- দাদু কিন্তু ভীষণ রাগী। একদম দুষ্টু করবে না ওখানে গিয়ে।
এবার একটু বিরক্ত হয়ে পুলিনবাবু আবার বললেন
-- না দাদুভাই, আমি রাগী নই। আমি তো তোমার দাদু।
-- না, তুমি রাগী। রাগী দাদু।
এভাবে বার দশেক চলার পর আর সহ্য করতে পারলেন না পুলিনবাবু।
-- কি? আমি রাগী? সারাদিন রাগ চেপে আছি। আর আমি রাগী!!!
তাঁর চিৎকারে বারান্দায় ছুটে এল শম্পা।
-- সানি, আবার বাঁদরামো করেছিস? কতবার বলেছি দাদু রাগী, দুষ্টু করিস না।
No comments:
Post a Comment