Tuesday, October 22, 2019

স্বাধীনতা দিবস

(ও' হেনরির একটা গল্প নিজের মত করে লিখলাম)


আজ ১৫ই অগস্ট। দুপুরে জম্পেশ খাওয়া হবে হরির। এমনিতে তার অবস্থা খুব একটা ভালো না। বেশিরভাগ দিন-ই দুবেলা খাওয়া জোটেনা। মাঝে মাঝেই রাত্রে ঐ হোটেলের কাঙালি ভোজনে পেট ভরায় হরি। তবে আজ ভালো খাওয়া হবে। পোলাও, পাঁঠার মাংস, পায়েস। এই দিনে প্রচুর ক্লাবে গরীবদের ডেকে খাওয়ায়। অনেকে ক্লাবের বাইরে  নিজের থেকে খাওয়ায়। হরি শুনেছে সামনের বছর স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তি, হয়ত আরো ভালো খাওয়া হবে। আচ্ছা, এদেশের লোকেদের কেন মনে হয় যে গরীবদের শুধু স্বাধীনতা দিবসের দিন খিদে পায়?

তবে হরির আলাদা ব্যবস্থা আছে। হরি গত পাঁচ বছর ধরে পাড়ার নেতাজী মূর্তির নিচে বসে থাকে। অবিনাশবাবু আসেন। হরিকে নিয়ে যান "কালীমাতা ভোজনালয়"। তারপর পেট পুরে আহার। অবিনাশবাবু খান না কিছুই। পুরো পয়সা উনি দেন। গত পাঁচ বছর ধরে এই আয়োজন। হরি শুনেছে অবিনাশবাবু নাকি যুবা বয়সে স্বাধীনতা সংগ্রামী ছিলেন। জেলেও গেছেন কয়েকবার।

আজ কিন্তু হরির অন্য মুশকিল। তরুণ সঙ্ঘ থেকে আজ বিরিয়ানি খাওয়ানো হচ্ছিল। হরি এই সুখাদ্যের নাম শুনেছে বহুবার। কিন্তু কোনদিন খায়নি। পয়সাই নেই তো খাবে কী। আজ তাই লোভ সামলাতে না পেরে সেখানে পেট ভরে খেয়ে এসেছে। মুস্কিল হচ্ছে একটু বাদেই অবিনাশবাবু আসবেন। ওনার সঙ্গে না খেলে যদি ওঁর মনে আঘাত লাগে? হরি কি করবে বুঝতে পারছে না। পেট একদম ভরা যে!!

অবিনাশবাবু এলেন। সেই এক পোশাক। সাদা পাঞ্জাবী আর পাজামা। যদিও প্রতিবারের মত এবার পরিষ্কার না। বেশ নোংরা। যেন অনেকদিন কাচা হয়নি। এসে হরিকে ডাকলেন। হরি না করতে পারলো না। কালীমাতা ভোজনালয়ের খাবার বেশ ভালো। হরি ভরপেটের উপর-ও ভরে যেতে লাগল। হরি যদি স্কুলে পড়ত কোনদিন জানত একে রসায়নে বলে super saturated. অবিনাশবাবু বললেন -- "পেট ভরেছে তো?"

হোটেল থেকে বেরিয়ে অবিনাশবাবুকে বিদায় জানিয়ে হরি দু পা হাঁটতে গিয়ে উল্টে পড়ল। ঐ অবস্থায় পড়ে আছে দেখে হরিকে পাড়ার ক্লাবের ছেলেরা হাসপাতালে নিয়ে গেল ভ্যানে করে। সেদিন হাসপাতালে আরো একজন ভর্তি হলেন। অবিনাশবাবু। বিকেল বেলা অবিনাশবাবুর মৃত্যুর পর হাসপাতালের দুই ডাক্তারকে নিজেদের মধ্যে বলতে শোনা গেল --

"বুড়োটা কেন মরল জানো? তিনদিন কিছু খায়নি। শুনেছি নাকি হাতে একদম পয়সা ছিল না।" 

Friday, October 18, 2019

শীতের বিকেল

ডালাস শহরে হাল্কা ঠাণ্ডা পড়েছে। আজ বিকেলে ডিপার্টমেন্ট থেকে বাড়ির দিকে রওয়ানা দিচ্ছি, এমন সময় চোখে পড়ল সামনের গাছের উপর বিকেলের সূর্যর আলো। সবুজ পাতার উপর এক সোনালি রং। মনে পড়ে গেল আমার ছোটবেলার স্কুল জীবনের কথা। তারাবাগ বাস স্ট্যান্ড থেকে বাড়ি ফিরতাম তারাবাগ মাঠের উপর দিয়ে। সে জায়গাটা হেঁটে হেঁটে এক মেঠো পথে পরিণত হয়েছিল। শীতের দিনে বাড়ি ফেরার সময় চোখ থাকত ঐ গাছগুলির উপরে। যতক্ষণ আলো, ততক্ষণ খেলা হবে। ৫ ওভার, বা ৩ ওভারের দুটো ম্যাচ খেলা হত। কখনো লোক কম হলে ওয়ান ড্রপ ওয়ান হ্যান্ড। মনে আছে বাড়ি ফিরলেই মা কানে হাত দিয়ে বলত -- "কানটা ঠাণ্ডা, একটু আগে আসতে পারিস না?"

গেন্সভিলে যখন পড়তে যাই, তখনো শীতের বিকেল এক আলাদা আমেজ আনত। একেই গেন্সভিল প্রায় আমার দ্বিতীয় বাড়ি। মনে পড়ে গত বছর এক কাজে ওহায়োর এক শহরে গেছি। দেখি এক জায়গায় লেখা I-75. ম্যাপ খুলে দেখি এই সেই রাস্তা যা সোজা গেন্সভিল গেছে। কতবার গেন্সভিল থেকে অন্য কোথাও যেতে গেলে এই রাস্তা ধরে যেতাম। আজ সেই রাস্তাকে এত দূরে দেখে মনে হল যেন বাড়ি ফেরার রাস্তা দেখছি। যাই হোক, গেন্সভিলে যখন ল্যাব থেকে বিকেলে বাড়ি ফিরতাম, তখনো এই গাছের পাতায় শেষ বিকেলের আলো দেখে মনে পড়ত তারাবাগের কথা। হাল্কা শীতে ঠোঁট ফাটে, একটু বেশি ঘুম পায়। আমাদের ডিপার্টমেন্টের পাশেই ছিল সেঞ্চুরি টাওয়ার। টাওয়ারের গাইয়ে সেই আলো পড়ত। পাশেই ছিল মিউজিক ডিপার্টমেন্ট। সেখানকার ছাত্রদের গানের প্র্যাকটিসের সময় তখন। পাতা ঝরানো সেই বিকেলে, ঐ গানের তালে, ঐ আলোর খেলায় বার বার বাড়ির জন্য মন খারাপ করত। আর কোনদিন কি তারাবাগের মাঠে খেলতে পারব?

আজও করল।