Friday, June 24, 2016

ধনক

অপু-দূর্গাকে নিশ্চয় সবার মনে আছে? বা আলি- জাহরাকে? সেই পারস্য দেশের সিনেমা "বাচ্চা-এ-আসমান"-এর দুই খুদে ভাই বোন, যারা এক পাটি জুতো নিয়ে স্কুল যেত! আসলে চলচ্চিত্রের পর্দায় ভাই-বোনের গল্প বার বার ঘুরে ফিরে এসেছে। বিখ্যাত পরিচালক নাগেশ কুকুনুর এবার এরকমই দুই ভাইবোনকে নিয়ে বানালেন তাঁর নতুন সিনেমা "ধনক"।
       দিদি পরি আর ভাই ছোটুর গল্প "ধনক"। অনাথ ভাইবোন থাকে নিঃসন্তান কাকা আর কাকিমার কাছে। কাকা তাদের নিজের ছেলে মেয়ের মত স্নেহ করলেও কাকিমা কিন্তু মেনে নিতে পারেন না। তার মধ্যে ছোটু আবার চোখে দেখতে পায়না। ছোটু কিন্তু জন্মান্ধ না। বছর চার আগে অপুষ্টিতে ছোটু দৃষ্টিশক্তি হারায়। পরির ইচ্ছা একদিন ছোটু নিজের দৃষ্টি ফিরে পেয়ে আকাশের সাতরঙা রামধনু দেখুক। এই রামধনুর নামেই সিনেমার নাম "ধনক"।
       রাজস্থানে থর মরুভূমির কাছে এক ছোট গ্রামে বাস পরি আর ছোটুর। পরি ছোটুকে চোখের বাইরে যেতে দেয়না। রোজ একসাথে স্কুলে যায় দু'জনে। নদী থেকে জল আনার সময় ছোটুর কোমরে নিজের ওড়না বেঁধে দেয় পরি, যাতে ভাই হারিয়ে না যায়। তাই বলে ভেবো না দু'জনের মধ্যে ঝগড়া হয় না। তোমরা তোমাদের দিদি বা ভাইয়ের সাথে ঝগড়া করোনা? করো তো? তাহলে পরিরা কেন করবেনা? পরি শাহরুখ খানের ভক্ত আর ছোটু সালমান খানের। এই নিয়ে ঝগড়া লেগেই আছে দু'জনের। এমনকি পরি বেশিক্ষণ শাহরুখের প্রশংসা করলে ছোটু কানে হাত দিয়ে "মাফ করো সালমান ভাই" বলে। এহেন পরি একদিন জানতে পারে শাহরুখ খান রাজস্থানে এসেছেন নিজের নতুন সিনেমার শুটিং করতে। ভাইয়ের চোখের অপারেশনের জন্য যদি শাহরুখ পয়সা দেন, এই আশায়  ভাইকে নিয়ে বাড়ি থেকে পালায় পরি। শুরু হয় দুই ভাইবোনের পদব্রজে রাজস্থান ভ্রমণ। পরি কি পারে শাহরুখ খানের সঙ্গে দেখা করতে? ছোটু কি রামধনু দেখতে পায়? এই প্রশ্নের উত্তর আর দিচ্ছি না। তোমরা সিনেমা হলে গেলেই এর উত্তর পেয়ে যাবে।
      আমাদের এই জটিল আর গতিময় জীবনে রূপকথার বড়ই অভাব। পরিচালক নাগেশ কুকুনুরকে ধন্যবাদ এত সুন্দর একটি গল্প উপহার দেয়াড় জন্য। বহুদিন বাদে এরকম একটি মিষ্টি, সহজ, সরল গল্প দেখলাম রূপোলী পর্দায়। পৃথিবীতে সবাই যে খারাপ মানুষ না, ভালো লোকেরা এখনও এই দুনিয়ায় আছেন; এই বক্তব্যটি যেন বার বার ফিরে আসে এই সিনেমায়। অভিনয়ের দিক থেকে পরির ভূমিকায় হেতল গাদা অসাধারণ। আশা করি হেতল বড় হয়ে একজন প্রতিষ্ঠিত অভিনেত্রী হবেন। ছোটু হিসেবে কৃষ ছাবরিয়াও খুব ভালো অভিনয় করেছেন। এই সিনেমার আসল প্রাপ্তি হচ্ছে ক্যামেরার কাজ। রাজস্থানকে ভীষণ সুন্দর ভাবে দেখিয়েছেন পরিচালক মশাই। এই রাজস্থান কিন্তু প্রাসাদ বা রাজাদের রাজ্য নয়; এই রাজস্থান পরি-ছোটুর মত সাধারণ মানুষদের বাসস্থান; যেখানে পরিষ্কার বালির উপর দুই ভাইবোন বিকেল বেলা খেলা করে, যেখানে রাস্তায় মহিলারা রংবেরঙের পোশাক পরে গান গাইতে গাইতে চলেন, যেখানে মাঝে মধ্যেই বালির ঝড় ওঠে। সিনেমার গনগুলিও অত্যন্ত শ্রুতিমধুর। তাহলে আর দেরি কিসের? তোমার বাড়ির কাছের সিনেমা হলে গিয়ে "ধনক" দেখে এসো; দেখ হয়ত তোমার মনের মধ্যেও রামধনু দেখতে পাবে!! 

No comments:

Post a Comment