বাড়ি ফেরার গল্প কিন্তু কেউ খুব একটা করে না। রাবণবধের পর শ্রীরামচন্দ্র কিভাবে বাড়ি ফিরেছিলেন বা কংস হত্যার পর শ্রীকৃষ্ণের বাড়ি ফেরার কথা কেউ তেমন বলে না। অথচ এই বাড়ি ফেরার মধ্যে এক অদ্ভুত আনন্দ আছে। সারাদিনের পরিশ্রমের শেষে যেন আরামের জায়গায় ফেরা। লক্ষ্য করে দেখবেন, এই সময় কোন বিঘ্ন ঘটলে ভীষণ রাগ হয়। ধরুন আপনি অফিস যাচ্ছেন, রাস্তায় জ্যাম পেলেন, যতটা না মাথা গরম হবে, বাড়ি ফেরার সময় জ্যাম পেলে আরো বেশী হবে।
মনে পরে ছোটবেলায় স্কুল থেকে বাড়ি ফেরার সময় বেশ হুল্লোড় হত স্কুল বাসে। আমার সবচেয়ে ভালো লাগত বাস স্টপ থেকে নেমে বাড়ি অবধি হেঁটে যাওয়াটা। তখন স্কুল ছুটি হত বিকেল ৪টে। তারপর বিকেলবেলা পশ্চিমের সূর্যের আলোয় বাড়ি ফেরার আনন্দই ছিল আলাদা। গ্রীষ্মকাল হলে বাড়ি ফিরে প্রচুর সময় থাকত হাতে। শীতকালে কিন্তু ব্যাপারটা তা নয়। খানিকক্ষণের মধ্যেই সন্ধ্যা নামবে, তাই তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরেই তৈরি হওয়া খেলতে যাওয়ার জন্য। আবার যেদিন পরীক্ষার নম্বর বেরত, মনে হত বাড়ি ফেরার পথটা কত বড়। মা যেন জানতেন আমি কখন আসব। বা হয়ত আমাদের স্কুল বাসের আওয়াজ শুনতে পেতেন। তখন এমনিতেও বর্ধমানে বাস বেশী চলত না। তাই রুক্ষ চুল, ঘামে ভেজা বা বোতাম খুলে যাওয়া জামা পরিহিত আমি নিচ থেকে সবসময় দেখতে পেতাম মা বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছেন।
যাদবপুরে পড়াকালীন বাড়ি ফেরাটা বেশ কষ্টকর ছিল। আমাদের বেহালায় প্রায়শয় জ্যাম হত। তারপর তো থাকত চৌরাস্তা থেকে অটোর লাইন। কোনকোনদিন তার মধ্যেও জলদি অটো পেয়ে গেলে ভীষণ আনন্দ হত। তৃতীয় বর্ষ থেকে জি আর ই-র কোচিঙে যখন ভর্তি হলাম, বাড়ি ফিরতে বেশ রাত হত। তবে কদিন বাদেই এক সঙ্গী পেলাম। সঙ্গিনী বললে বোধহয় ঠিক হবে। কোহিনুরদি। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে রাশিবিজ্ঞানের ছাত্রী। দু'জনে একসাথে ফিরতাম যোধপুর পার্ক থেকে বেহালা। প্রচুর আড্ডা হত। কোহিনুরদি কয়েক বছর বাদে আমার বর্ধমানের পাড়াতুত দাদা বাবানদাকে বিয়ে করে। পৃথিবীটা বড়ই ছোট।
গেন্সভিল থাকাকালীন ল্যাব থেকে ফিরতাম ১৬ বা ১৭ নম্বর বাসে। রাত হয়ে গেলে বাস কমে যেত। তাই অনলাইন দেখে নিতাম বাস কতদূর, সেই দেখে ল্যাব থেকে বেরোতাম। অনেক সময় এরকম রাত বিরেতে বাস স্ট্যান্ডে কোন বন্ধুর সাথে দেখা হয়ে যেত। আড্ডা মারতে মারতে বাস ভ্রমণ চলত। শেষের দিকে অবশ্য গাড়ি থাকার দরুন ফেরার অভ্যাসটা পালটে গিয়েছিল। মনে আছে রাত ২-৩ টের সময় ল্যাব থেকে ফেরার সময় দেখতাম কেউ কেউ রাস্তার ধার দিয়ে দৌড়াচ্ছে, কানে আই পড। অধ্যাবসয় দেখে অবাক হতাম। রাতের গেন্সভিলে গাড়ি চালাতে এক আলাদা আনন্দ ছিল। চারিদিক চুপচাপ, সকাল বা বিকেলের ভিড় নেই রাস্তায়; তার মধ্যে গাড়ি চালান, নিজের ছন্দে, নিজের গতিতে, চেনা রাস্তাগুলোকে যেন অন্যরকম লাগত।
মনে আছে একবার শিকাগো এয়ারপোর্টে বসে আছি দিল্লীর বিমানের প্রতীক্ষায়। দেখি এক প্রবাসী বাঙালী দম্পতিও নিজেদের ছেলে মেয়েকে নিয়ে অপেক্ষা করছেন। আলাপ হল। ভদ্রলোকের বাড়ি হুগলী। ভদ্রমহিলার কসবা। ছেলে মেয়ে দু'জনেরই জন্ম মার্কিন দেশে, তাই তাড়া সেই দেশেরই নাগরিক। মেরিল্যান্ডে এক স্কুলে পড়ে। ভদ্রলোক খুব খুশি, বহুদিন বাদে বাড়ি ফিরছেন। এক মাসের ছুটি, এইসব বলছিলেন আমায়। আমি শুধু ভাবছিলাম ছেলে মেয়ে দুটির কথা। তারা কি ভাবছে? তাদের কাছে এটা নিশ্চয় বাড়ি ফেরা না? ভদ্রলোকের এখন যা মনের ভাব, হয়ত এক মাস বাদে তাদের সেটা হবে। আবার ভাবলাম, ভদ্রলোকেরও কি সেটা হবে না? মার্কিন দেশের বাসস্থানটাও তো ওনার বাড়ি? কে জানে কি ভাবছেন উনি? আগেও বলেছি, বাড়ি কাকে বলে সেটাই আমি বুঝি না। হয়ত কোনদিন বুঝবো না। কিন্তু এই বাড়ি ফেরার আনন্দটা সবসময়ই উপভোগ করব।
মনে পরে ছোটবেলায় স্কুল থেকে বাড়ি ফেরার সময় বেশ হুল্লোড় হত স্কুল বাসে। আমার সবচেয়ে ভালো লাগত বাস স্টপ থেকে নেমে বাড়ি অবধি হেঁটে যাওয়াটা। তখন স্কুল ছুটি হত বিকেল ৪টে। তারপর বিকেলবেলা পশ্চিমের সূর্যের আলোয় বাড়ি ফেরার আনন্দই ছিল আলাদা। গ্রীষ্মকাল হলে বাড়ি ফিরে প্রচুর সময় থাকত হাতে। শীতকালে কিন্তু ব্যাপারটা তা নয়। খানিকক্ষণের মধ্যেই সন্ধ্যা নামবে, তাই তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরেই তৈরি হওয়া খেলতে যাওয়ার জন্য। আবার যেদিন পরীক্ষার নম্বর বেরত, মনে হত বাড়ি ফেরার পথটা কত বড়। মা যেন জানতেন আমি কখন আসব। বা হয়ত আমাদের স্কুল বাসের আওয়াজ শুনতে পেতেন। তখন এমনিতেও বর্ধমানে বাস বেশী চলত না। তাই রুক্ষ চুল, ঘামে ভেজা বা বোতাম খুলে যাওয়া জামা পরিহিত আমি নিচ থেকে সবসময় দেখতে পেতাম মা বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছেন।
যাদবপুরে পড়াকালীন বাড়ি ফেরাটা বেশ কষ্টকর ছিল। আমাদের বেহালায় প্রায়শয় জ্যাম হত। তারপর তো থাকত চৌরাস্তা থেকে অটোর লাইন। কোনকোনদিন তার মধ্যেও জলদি অটো পেয়ে গেলে ভীষণ আনন্দ হত। তৃতীয় বর্ষ থেকে জি আর ই-র কোচিঙে যখন ভর্তি হলাম, বাড়ি ফিরতে বেশ রাত হত। তবে কদিন বাদেই এক সঙ্গী পেলাম। সঙ্গিনী বললে বোধহয় ঠিক হবে। কোহিনুরদি। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে রাশিবিজ্ঞানের ছাত্রী। দু'জনে একসাথে ফিরতাম যোধপুর পার্ক থেকে বেহালা। প্রচুর আড্ডা হত। কোহিনুরদি কয়েক বছর বাদে আমার বর্ধমানের পাড়াতুত দাদা বাবানদাকে বিয়ে করে। পৃথিবীটা বড়ই ছোট।
গেন্সভিল থাকাকালীন ল্যাব থেকে ফিরতাম ১৬ বা ১৭ নম্বর বাসে। রাত হয়ে গেলে বাস কমে যেত। তাই অনলাইন দেখে নিতাম বাস কতদূর, সেই দেখে ল্যাব থেকে বেরোতাম। অনেক সময় এরকম রাত বিরেতে বাস স্ট্যান্ডে কোন বন্ধুর সাথে দেখা হয়ে যেত। আড্ডা মারতে মারতে বাস ভ্রমণ চলত। শেষের দিকে অবশ্য গাড়ি থাকার দরুন ফেরার অভ্যাসটা পালটে গিয়েছিল। মনে আছে রাত ২-৩ টের সময় ল্যাব থেকে ফেরার সময় দেখতাম কেউ কেউ রাস্তার ধার দিয়ে দৌড়াচ্ছে, কানে আই পড। অধ্যাবসয় দেখে অবাক হতাম। রাতের গেন্সভিলে গাড়ি চালাতে এক আলাদা আনন্দ ছিল। চারিদিক চুপচাপ, সকাল বা বিকেলের ভিড় নেই রাস্তায়; তার মধ্যে গাড়ি চালান, নিজের ছন্দে, নিজের গতিতে, চেনা রাস্তাগুলোকে যেন অন্যরকম লাগত।
মনে আছে একবার শিকাগো এয়ারপোর্টে বসে আছি দিল্লীর বিমানের প্রতীক্ষায়। দেখি এক প্রবাসী বাঙালী দম্পতিও নিজেদের ছেলে মেয়েকে নিয়ে অপেক্ষা করছেন। আলাপ হল। ভদ্রলোকের বাড়ি হুগলী। ভদ্রমহিলার কসবা। ছেলে মেয়ে দু'জনেরই জন্ম মার্কিন দেশে, তাই তাড়া সেই দেশেরই নাগরিক। মেরিল্যান্ডে এক স্কুলে পড়ে। ভদ্রলোক খুব খুশি, বহুদিন বাদে বাড়ি ফিরছেন। এক মাসের ছুটি, এইসব বলছিলেন আমায়। আমি শুধু ভাবছিলাম ছেলে মেয়ে দুটির কথা। তারা কি ভাবছে? তাদের কাছে এটা নিশ্চয় বাড়ি ফেরা না? ভদ্রলোকের এখন যা মনের ভাব, হয়ত এক মাস বাদে তাদের সেটা হবে। আবার ভাবলাম, ভদ্রলোকেরও কি সেটা হবে না? মার্কিন দেশের বাসস্থানটাও তো ওনার বাড়ি? কে জানে কি ভাবছেন উনি? আগেও বলেছি, বাড়ি কাকে বলে সেটাই আমি বুঝি না। হয়ত কোনদিন বুঝবো না। কিন্তু এই বাড়ি ফেরার আনন্দটা সবসময়ই উপভোগ করব।
No comments:
Post a Comment