Saturday, October 7, 2017

ইচ্ছে

খেলা শেষের আধঘণ্টা আগে ঘটল ঘটনাটা। পেনাল্টি বক্সের বাইরে শ্যামলকে পাস দিল অরুণ। ডান পায়ের এক জোরালো শট একটুর জন্য ক্রসবারের উপর দিয়ে চলে গেল। 
"ঈশ, দারুণ শট ছিল।"
"গোলটা তো হল না।"
 
এই আক্ষেপটা সারা জীবন গেল না শ্যামলবাবুর। পরে পাড়ার মাঠে, স্কুলে, বহুবার ভেবেছেন এরকম একটা সুযোগ পেলে আবার ঐ বক্সের বাইরে থেকে জোরালো শটে গোল করবেন। একটা নামও ঠিক করে রেখেছিলেন এই গোলের। "গোলা গোল" -- মানে গোলার মত উড়ে গিয়ে গোল। কিন্তু ইচ্ছেটা ইচ্ছেই রয়ে গেল। 

কলেজে পড়তেও দু-একবার চেষ্টা যে করেননি তা নয়। ভালো খেলতেন বলে কলেজ টিমে রেগুলার চান্স পেতেন। গোলও করেছেন বেশ কয়েকটা। কিন্তু ঐ গোলা গোল করার সুযোগ আর হয়নি। কোনদিন ওরকম বক্সের বাইরে আর বলই পেলেন না। 

শ্যামলবাবু চাকরি পেলেন বম্বে শহরে। অফিস থেকে লোকে মাঝে মাঝে ক্রিকেট খেলতে যেত, তবে ফুটবল একদমই খেলা হত না। হাঁফিয়ে উঠলেন তিনি। কয়েক বছর বাদে ট্রান্সফার পেলেন অসমের এক ছোট মফঃস্বল শহরে। সেখানে তাঁর সহকর্মীরা কিন্তু ফুটবল খেলতে ভালোবাসতেন। আবার খেলা শুরু করলেন শ্যামলবাবু। কিন্তু দুর্ভাগ্য। ঐ জায়গায় বল কেউ বাড়াল না। 

বিয়ের পর আস্তে আস্তে খেলা কমে যেতে লাগল। মেয়ের জন্মের পর আবার ট্রান্সফার নিয়ে বম্বে চলে এলেন। মফঃস্বলে ভালো স্কুল নেই, তাই সেখানে আর থাকা গেল না। ফুটবল বুট জোড়াও একদিন কোথায় হারিয়ে গেল। 

বহু বছর বাদে ফিলাডেলফিয়ার মাঠে নাতির ফুটবল খেলা দেখছিলেন শ্যামলবাবু। একবার বলটা তাঁর পায়ের কাছে এল। ভাবলেন একবার ঐ গোলা শটটা নিয়ে দেখাই। নিলেন। কিন্তু বলটা হাল্কা গড়িয়ে নাতির কাছে চলে গেল। 

"থ্যাংকস দাদু, নাইস পাস।" 

শ্যামলবাবু যেন সেদিন নতুন করে বুঝলেন এ জন্মে আর ঐ গোল করা হবে না। এই চিন্তাটা সবসময় তাঁর মাথায় ঘুরতে লাগল। এমনকি হাসপাতালে মৃত্যুশয্যাতেও তাঁর মনের মধ্যে আক্ষেপটা যেন যাচ্ছিল না। 




"বলটা ধরো শ্যামল।" 

যে তাঁকে কথাগুলো বলল, তাকে কোথায় দেখেছেন মনে করতে পারলেন না শ্যামলবাবু। মুখটা ভীষণ চেনা, কিন্তু...
নিজের গায়ে নীল জার্সি দেখে বুঝলেন কোন এক টিমের হয়ে খেলছেন। বলটা সামনে আর এক নীল জার্সিকে পাস দিলেন। কিন্তু একে তিনি চেনেন, এর নাম রন্টু। কৃশানু দে। এটা কোথায় আছেন তিনি। 

এবার বুঝতে পারলেন, যিনি প্রথমে তাকে বলটা দিলেন তিনি তো শৈলেন মান্না!! 

"হাঁ করে দাঁড়িয়ে কি করছ শ্যামল, বক্সের কাছে যাও।"

মাঠের মাইরে দাঁড়িয়ে চিৎকার করলেন অমল দত্ত। ছুটলেন শ্যামলবাবু। কৃশানু এবার ব্যাকপাস করল আহমেদ খানকে। আহমেদ খান একজনকে কাটিয়ে বল বাড়ালেন শ্যামলবাবুর জন্য। বক্সের বাইরে বল। সামনে দুজন ডিফেন্ডার ছুটে আসছে। এক মুহূর্ত নষ্ট করলেন না শ্যামলবাবু। গোলা শট চলল। এবার আর ক্রসবারের উপর দিয়ে না। মাপা শট। বল গোলের ডান দিকের কোণ লক্ষ্য করে এগোচ্ছে। নিশ্চিত গোল। 

কিন্তু একি। বল গোলে ঢোকার ঠিক আগের মুহূর্তে একটা সাদা গ্লাভসের আঙ্গুল এসে সেটাকে ক্রসবারের উপর দিয়ে বাইরে পাঠিয়ে দিল। গোল করার ব্যর্থতায় হতবাক শ্যামলবাবু। 

সামনে গ্লাভস খুলে তাঁর দিকে তাকিয়ে হাসলেন পিটার থংগরাজ। 

No comments:

Post a Comment