মহা ফাঁপড়ে পড়েছি। কখন যে এই ভুলটা করলাম নিজেও খেয়াল করিনি। "তোমার"-এর জায়গায় হয়ে গেছে "তেমার"। এবার কি করে ঠিক করি? আমার সাধের আর্টেক্স কলমটা চোখের সামনে, কিন্তু আমি হাত দিতে পারব না। সামনে মা, জেঠিমারা , কাকিমারা মিলিয়ে গোটা পাঁচেক লোক। তারপর মা সরস্বতী। মাঝে আমার বই ও কলম। মানে আমার একার না, এই গলির সবার।
এদিকে বাইরের ঘরে বসে বাবা-কাকা-জেঠুরা আড্ডা দিচ্ছে। মাঝে মাঝেই শুনছি "সিটু", "সোমেন মিত্র", "রাও" এসব শব্দ। বারান্দায় রাজুদা, সোনাদি , সোনাদির বর শুভদা, এরা সবাই। আমার বয়সী তো কেউ নেই যে আমি কথা বলব? মন্টিদি আছে, কিন্তু একে সে আমাকে একদমই পাত্তা দেয় না, আর তার দেখা পাওয়া শক্ত।
একটু বাদে গিয়ে দেখি সবাই ঠাকুরের সামনে থেকে সরে গেছে। একমাত্র রত্নাকাকিমা একটু দূরে বসে আছে। টুক করে কলমটা নিয়ে আসা যায় না?
-- কি রে পিকলু, ওখানে কি করছিস?
-- না আমার কলম...
-- হ্যাঁ, তোর কলম তো দেখতে পাচ্ছি ওখানে, ওটাকে কি করছিস?
-- এই কাকিমা, মানে পড়ে যাচ্ছিল, তাই তুলে দিলাম।
-- না আমার কলম...
-- হ্যাঁ, তোর কলম তো দেখতে পাচ্ছি ওখানে, ওটাকে কি করছিস?
-- এই কাকিমা, মানে পড়ে যাচ্ছিল, তাই তুলে দিলাম।
নাহ, আমার আর বানান ঠিক করা হবে না। এদিকে অঞ্জলী হলেই প্রসাদ। খাওয়া শেষ হতে না হতেই রতন, বিলুরা আসবে সাইকেল নিয়ে, পাড়ার ক্লাবে যাব। আর সেখানেই... ধুর বাবা। কেউ দেখছে না দেখে বিছানার পাশে এসে একবার চিঠিটা খুলে দেখলাম। না, ঠিক হয়নি বানানটা।
অঞ্জলীর ডাক পড়তেই সবাই এগিয়ে গেলো। শুভ্রা কাকিমা বারান্দা থেকে হাঁক দিয়ে মন্টিদিকে ডেকে আনলেন। এ বাড়ির জেঠু আর আমার বাবা, দুজনে ঠাকুর দেবতায় বিশ্বাস করেন না। তাই তাঁরা বাইরের ঘরেই রইলেন। আমি অঞ্জলী দিতে দিতে বার বার ঠাকুরকে বললাম,
"মা, দয়া করে বানানটা ঠিক করে দাও, কথা দিচ্ছি ফাইনালে ইতিহাসে আর টুকব না।"
অঞ্জলী শেষ। সবাই খেতে বসেছে। বাবার আর জেঠুর অঞ্জলী না দিলেও খেতে আপত্তি থাকে না। আমি খুব চিন্তায়। অল্প অল্প খাচ্ছি। এই সময়
-- পিকলু এদিকে আয় তো।
-- যাই জেঠু।
-- যাই জেঠু।
পড়ার ঘরে যেতেই জেঠু বলল
-- শোন বেশি সময় নেই। এই নে আমার উইং সাং কলম। আজই সকালে কালি ভরেছি। যা লেখার জলদি লেখ।
চোখ পড়ল টেবিলে রাখা ক্যামলিনের দোয়াত আর ড্রপারের দিকে। কিন্তু আমি জেঠুর কথা শুনে হতবাক। বুঝলেন কি করে?
-- তুই কি ভাবিস? আমি কিছু বুঝি না। বার বার তোর মূর্তির সামনে কলম হাতড়াতে যাওয়া, বিছানার পাশে দাঁড়িয়ে পাঞ্জাবীর পকেট থেকে বার করে চিঠি পড়া, সবই দেখেছি। শোন। তাড়াতাড়ি লেখ। নইলে লোকে সন্দেহ করবে। আর তোকে বার বার বলেছি পরীক্ষায় লেখার পর রিভাইজ করতে, আজ প্রমাণ পেলাম সেটা করিস না।
This comment has been removed by the author.
ReplyDeleteThis comment has been removed by the author.
ReplyDelete