Wednesday, January 2, 2019

নয়ের দশকের গল্পঃ ২

-- সরি রে, মন খারাপ তোর?
-- নাহ, আজ সন্ধ্যাবেলা আসবি র‍্যাকেট নিয়ে?
-- যাব। কিন্তু ম্যাডাম এরকম ক্লাসে সবার  মধ্যে তোর জেঠুর কথা বললেন?
-- তো কি করব বল?  তখনকার মানুষ বুঝত না ইন্টারনেট কত খারাপ। আমার জেঠুর অসুখটা তো প্রথম হয়নি। তখনকার দিনের অনেকেরই এই  ক্যানিংহ্যাম সিন্ড্রোম হয়। অত্যধিক ইন্টারনেট ব্যবহারের ফলে লোকে একা হয়ে যেত, আস্তে আস্তে কথা বলতে ভুলে যেত। আমার জেঠুর মাত্র আঠারো বছর বয়সে এটা  হয়। সারাদিন নাকি ফেসবুক আর টুইটার নিয়ে বসে থাকত। তার  ফল।
-- সেদিন ক্লাসে যখন ফেসবুক পড়ানো হল আমি তো  অবাক।  লোকে  এরকম  ছিল আগে?  ঘণ্টার পর ঘণ্টা নাকি  ওভাবে গল্প করত অন্যদের সঙ্গে, যাদের চোখেও দেখতে পারছে না। আবার নাকি ঝগড়াও করত।
-- সত্যি। এইসব পাগলামি করার ফলেই  আজ এই  হাল।
--  না সেটা না, সাইবার যুদ্ধের সঙ্গে ফেসবুকের সম্পর্ক নেই।
-- তা ঠিক,  তবে ভেবে দেখ সাইবার যুদ্ধ কীভাবে শুরু হয়েছিল?
-- হুম। যাকগে, আসছি একটু বাদে। তুই ককটা  আনবি?
-- হ্যাঁ।

সন্ধ্যা সাতটার সময় পাড়ায় যখন রোলের দোকানে ভিড় জমতে শুরু করল, তখন ল্যাম্পপোস্টের আলোয় টেবিল টেনিস র‍্যাকেট আর শাটল কক নিয়ে মানিক আর তার বন্ধু তমাল খেলতে শুরু করল।  আধঘণ্টা খেলার পর খেলা  বন্ধ করতে হল।  কারণ সেখানে  এসে পড়েছে তাদের স্কুলের  বন্ধু  রোহণ। খুব  উত্তেজিত দেখাচ্ছিল রোহণকে।  এসেই  ওদের বলল

--  চল এখান থেকে, কথা  আছে।

-- কি   কথা, এখানেই বল না। খেলতে খেলতে শুনি। 

মানিকের  খেলা  ছেড়ে যাওয়ার কোন  শখ নেই।

-- না,  এখানে বলা যাবেনা। সাজগোজের গল্প। 

এখানে একটা কথা বলা দরকার। এই ২০৯৩ সালে সাইবার  যুদ্ধের কথা জনসমক্ষে বললে লোকে  সন্দেহ  করে। এখনো সাইবার যুদ্ধের ভীতি সবার মন থেকে যায়নি। তাই তমাল, মানিক  আর রোহণ সবার সামনে সাইবার যুদ্ধ না বলে  সাজগোজ বলে। প্রথমে সাযু বলত, কিন্তু একদিন মানিকের মা সেটা ধরে ফেলেন আর  প্রচণ্ড তিরস্কার করেন। তাই এই নাম।

খেলা  ছেড়ে তিনজন মিলে  হাজির হল মসজিদপাড়ার মাঠে। তখনও কয়েকটা গরু চরে বেরাচ্ছে। আসে পাশে রিকশার হর্ণ ছাড়া  আর কিছুই শোনা যায়না।

--  এই দেখ,  এটা  পেয়েছি।

--  কি এটা?

-- এটা আমার  দাদুর  ডায়রি।

-- তোর দাদু, মানে  সাইবার যুদ্ধে যিনি ভারতবর্ষের অন্যতম অপরাধী ছিলেন। যাঁকে যুদ্ধের পর আর খুঁজে পাওয়া যায়নি?

--  আহ মানিক, ভুলে যাস না, তুই রোহণের দাদুর  সম্বন্ধে  বলছিস।

--  না না, ঠিক  আছে।  আমার দাদু অপরাধী ছিলেন আমাদের পুরো  পরিবার জানে। দাদুকে নিয়ে  আমার কোন  আলাদা সেন্টিমেন্ট  নেই।

-- তো কি আছে সেই  ডায়রিতে?

-- জানি  না, বাড়িতে বললে ঐ ডায়রি পুলিশকে দিয়ে  দিত। জানিস  তো সরকার নিয়ম করেছে সাইবার যুদ্ধের অপরাধীদের সব জিনিস বাজোয়াপ্ত  করার। আর  আমাদের পরিবারের উপর আলাদা  নজর থাকেই পুলিশের।

--  সেই ডায়রি কই?

-- এই যে। তুই  রাখবি?

-- আমি রাখলে আমার মা ধরে ফেলবে। তমাল  রাখ। তমালের বাড়িতে এত ঝামেলা নেই।

-- ঠিক  আছে। আমি রাখছি। এক কাজ কর। রোববার দুপুরে আমাদের বাড়ি চলে আয়। বাড়িতে  বলব আমরা ছাদে আড্ডা  দেব। তখন এটা পড়া যাবে। 

-- একদম।

No comments:

Post a Comment