Friday, January 25, 2019

মেলার মজা

ছেলেটিকে অনেকক্ষণ ধরে দেখছিলাম। একা একা দাঁড়িয়ে কাঁদছিল।  মানে জোরে চেঁচিয়ে কান্না নয়, ফুঁপিয়ে  কান্না।  বছর দশ-বারো বয়স। এই বয়সের ছেলেরা চট করে কাঁদে না। বিশেষ করে এইরকম মেলার মধ্যে, সবার সামনে। চারদিকে ভিড়, তাই কেউ পাত্তাও দিচ্ছে না। একটু ছোট ছেলে হলে নাহয় হারিয়ে গেছে সন্দেহ হত। কিন্তু এই বয়সের ছেলে হারিয়ে যাবে, এরকম সম্ভবনা কম। এগোলাম ছেলেটির দিকে।

--  কিরে কাঁদছিস কেন? 
-- আমার পকেটে কুড়ি টাকা ছিল, কোথায় হারিয়ে গেল, খুঁজে পাচ্ছি না।
-- এতে কাঁদার কী আছে? বাবা বকবে?
-- মোগলাই খেতে পারবনা।
-- মানে?
-- এই  দেখুন না, মেলায়  মোগলাইয়ের স্টল। রোজই আসি মেলায়,  কিন্তু  যা হাতখরচা পাই, দুবার নাগরদোলা চরলেই শেষ হয়ে যায়। আজ দিদু  বাড়িতে এসেছে। আমাকে মেলা দেখতে কুড়ি টাকা  দিল। ভাবলাম মোগলাই  খেয়ে তারপর আবার নাগরদোলা চরব। হল না।
--  তুই  মোগলাই খাওয়ার জন্য কাঁদছিস?
--  হ্যাঁ, আমি এর আগে মাত্র একবার খেয়েছি। গতবছরের মেলাতে। আমাদের বাড়ির কাছে কেউ  মোগলাই বানায় না।
--  তা এতদিন এলি খেলি না কেন?
-- আমি তো মেলার এইদিকটায় আসিনা। ওদিকে নাগরদোলা, বেলুন ফাটানো, রিং মাস্টার,  মরণকূপ এসব দেখি। গতকাল এদিকে আসতে গিয়ে এই দোকানটা দেখলাম।
-- হুম।
-- যাই বাড়ি যাই।
--  দাঁড়া। চল তোকে একটা মোগলাই কিনে দি।
-- এ মা, আপনি কেন দেবেন?  আপনাকে তো আমি চিনি না।
-- সে ঠিক আছে। কতই  বা দাম একটা মোগলাইয়ের? কত দাম?
-- সাত টাকা। কিন্তু  আপনি  কেন দেবেন? না না, এটা ঠিক না।
--  আরে আমিও তোর মত ছিলাম। মেলায়  এসে মোগলাই খাওয়ার  মজাই  আলাদা। চল।
-- বিশ্বাস করুন, আমার কিন্তু সত্যি টাকা হারিয়েছে। মিথ্যে করে মোগলাই খাওয়ার জন্য আপনার কাছে বলিনি।
-- জানি রে বাবা, তোর মত ছেলে এসবের জন্য রাস্তায় দাঁড়িয়ে কাঁদবে না।
-- আপনি খাবেন না।
-- না  রে, আমার বাইরের খাবার সহ্য  হয়না। তুই খা।


যাক, ছেলেটার  পকেট মেরে যে কুড়ি টাকা পেয়েছিলাম, তার থেকে তের টাকা বাঁচল।  এটুকু ছেলেকে মোগলাই থেকে বঞ্চিত করা উচিত নয়। যাই এবার মরণকূপের কাছে। ওখানে অনেক লোক ভিড় করে থাকে, পকেটের দিকে নজর  থাকে  না। 

No comments:

Post a Comment