Saturday, January 16, 2016

থাপ্পড়

"স্যার ভালো আছেন?"
"আরে, কবে এলে? এস, এস, ভেতরে বস। আরে থাক থাক আর প্রণাম করতে হবে না।"
"পরশু রাত্রে এসেছি।"
"তোমার খবরটা পড়েছি কাগজে, বাড়িতে সবাইকে বলেছি দেখো এই ছেলেকে আমি নিজে হাতে অঙ্ক শিখিয়েছি, আজ সেই ছেলে অঙ্কে নোবেল মানে ফিল্ডস মেডেল পেয়েছে। তুমি তো বোধহয় প্রথম ভারতীয় তাই না? "
"না না স্যার, আমার আগে প্রফেসর ভারগভ পেয়েছিলেন ২০১৪-এ, আমি প্রথম বাঙ্গালি বলতে পারেন।"
"বেশ বেশ, ভাবা যায়, আমাদের এই স্কুলের ছেলে, সেই সাদা জামা, কালো প্যান্ট পড়ে স্কুলে আসতে সাইকেলে চেপে, সে আজ অঙ্কে নোবেল পেয়েছে। এই বিল্টু তোর মাকে বল চা করতে। "
"না না স্যার, চা লাগবে না।"
"আরে খাও খাও, শীতের দিন। তোমার সব খবর তো কাগজে পড়ি। সেদিন দেখি লিখেছে তোমার প্রিয় খাবার নাকি আলু পোস্ত। আমি তো শুনে হাসছি, আরে আমাদের বর্ধমানের ছেলে, তার প্রিয় খাবার আলু পোস্ত ছাড়া অন্য কিছু হতে পারে নাকি?"
"আপনার কি খবর স্যার, কাকিমা কেমন? আর কৌশিকদা?"
"তোমার কাকিমার বড় বাতের ব্যাথা, নড়তেই পারেনা তেমন। আমার চলছে। এখনও রোজ সকালে দু মাইল হাঁটি। কৌশিক স্টেট ব্যাঙ্কে চাকরি করে। এই তো বিল্টুওরই ছেলে, আমার একমাত্র নাতি। এবছর ক্লাস থ্রিতে উঠল। তা তোমার সঙ্গে বহুদিন বাদে দেখা হল। এত সকালে কি মনে করে?"
"ইয়ে স্যার আপনাকে একটা কথা বলার ছিল।"
"কি বলতো?"
"মনে আছে স্যার, ক্লাস নাইনে আপনি আমাকে একটা থাপ্পড় মেরেছিলেন?"
"মেরেছিলাম? মনে নেই তো। বয়স হচ্ছে তো। তা কেন মেরেছিলাম বলতো? তুমি তো ভালো ছেলে ছিলে? ক্লাসের ফার্স্ট বা সেকেন্ড বয়।"
"আমি একটা দ্বিঘাত সমীকরণ কষতে গিয়ে স্টেপ জাম্প করি, তাই। আপনি ভীষণ বকেছিলেন আর বলেছিলেন যেন কোনদিন আর স্টেপ জাম্প না করি। বিশ্বাস করুন, তারপর থেকে আর কোনদিন স্টেপ জাম্প করিনি। আই আই টি তে পড়তেও না, এম আই টি তে পড়তেও না, এখন যে হার্ভার্ড এ পড়াই, এখনও না। এমনকি যে কাজের জন্য এই ফিল্ডস মেডেলটা পেলাম, সেটা করতে গিয়েও না। যখনই স্টেপ জাম্প করার প্রলোভন জাগে, আপনার থাপ্পড়টা মনে পড়ে যায়।"


8 comments: