বছর দুয়েক আগে আমার বাড়ির কাজের মেয়ে ভাবিয়া একটি ১২-১৩ বছরের মেয়েকে নিয়ে এলো। আলাপ করালো, তার বোন ভারতী। ভারতী দাদা বৌদির সঙ্গে থাকতে এসেছে। রোগা, ছোট খাটো মেয়েটিকে দেখে মায়া হল। বাড়িতে একটু চকোলেট ছিল, তাই দিলাম। খুশি হয়ে আমাকে "থ্যাঙ্ক ইউ" বলল ভারতী। জানতে চাইলাম স্কুলে পড়ে কিনা। তাতে ভাঙ্গা হিন্দিতে জানাল ক্লাস ফোর পর্যন্ত পড়েছে। তারপর পড়েনি কেন জিজ্ঞেস করায় লজ্জা পেয়ে হেসে কি একটা বলল। দুর্ভাগ্যবশত আমি কন্নড় ভাষা জানি না, তাই, বুঝলামও না।
ভাবিয়া আর ভারতীরা আমার বাড়ির নিচেই থাকত। ভারতী শুনলাম আমার বাড়িওয়ালার বাড়িতে কাজ করে। ভাবিয়ার কাছে জানতে চাইলাম ঐ টুকু মেয়েকে কেন কাজে দিল, তাতে এমন ভাবে হাসল যেন প্রশ্নটি করাই আমার মুর্খামি। ভারতী মাঝে মাঝেই আমার বাড়িতে আসত দিদিকে ডাকতে বা কিছু বলতে। হাতের সামনে বিস্কিট, লজেন্স, কিছু থাকলেই দিতাম। একদিন সকালে ভাবিয়া চলে যাওয়ার মিনিট ১০ -এক বাদে এলো। আমাকে বলল দিদি ডাকছে। নিচে যেতে গেলে হেসে উঠে বলল "ভাইয়া, এপ্রিল ফুল।" বলেই জিভ কেটে নিয়ে বলল "সরি ভাইয়া।" ভীষণ অবাক হলাম। আমিও হেসে ফেললাম।
মাস ৩ এক বাদে ভাবিয়া এসে জানাল কিছু টাকা লাগবে, ভারতীর নাকি বিয়ে। চমকে জিজ্ঞেস করলাম কত বয়েস ভারতীর। জানতে পারলাম মাত্র ১৪। কেন এত অল্প বয়েসে বিয়ে জানতে চাইলে এবার ভাবিয়া বেশ বিরক্ত হল। আবার কিছু বলল কন্নড়ে যা আমি বুঝলাম না। যা বুঝলাম তা হল কেন ভারতী স্কুল ছেড়েছিল, আর কেনই বা দিদির কাছে এসে ছিল। তখনকার মত টাকা দিয়ে ভাবিয়া কে বিদায় দিলাম। এক বছর বাদে ভারতী আবার ফিরে এল, এবার স্বামীর সঙ্গে। তার স্বামী শুনলাম পাড়ার সুপারমার্কেটে নিরাপত্তাকর্মীর চাকরি পেয়েছে। ভারতী এবার পুরোদমে কাজে লেগে গেল আশেপাশের দু- তিনটে বাড়িতে। দেখা হতে লাগল আবার। একই রকম হাসিখুশি, যেন তেমন পাল্টায়নি তার জীবন। আমি ভেবে অবাক হতাম যে বয়েসে আমি সাইকেল করে টিউশান পড়তে যেতাম, সে বয়েসে ভারতী কি সুন্দর সংসার করছে।
কয়েক মাস আগে ভাবিয়া জানাল ভারতী গর্ভবতী। আস্তে আস্তে ভারতী কাজ করা বন্ধ করল। নিচেই থাকত। আমি অফিস যাওয়ার সময় দেখা হত। দিদি, জামাইবাবু, স্বামী সবাই কাজে চলে গেছে। ভারতী একা ঘরে রান্না করছে। আমাকে দেখে হেসে "বাই ভাইয়া" বলত। গত শনিবার থেকে দেখে ভাবিয়াদের বাড়ী বন্ধ। ভাবিয়াও কাজে আসে না। বাড়িওয়ালার কাছে গিয়ে জানলাম, ভারতীর সন্তান প্রসবের জন্য সবাই হাসপাতালে। তাই বলে সাতদিন? বেশ অবাক হয়েছিলাম। আজ বিকেলে পাশের বাড়ীর মহিলা জানালেন ভারতী আমাদের ছেড়ে চলে গেছে। রক্তের সমস্যা দেখা দিয়েছিল। ডাক্তারবাবু রক্ত দিলেও তা নিতে পারেনি ভারতী। সন্তান প্রসবের আগেই এই জগতের মায়া ত্যাগ করে।
খবরটা পাওয়া আর এই লেখাটার মাঝের সময়টা বেশ একটা অদ্ভুত মনের অবস্থার মধ্যে দিয়ে গেলাম। একদিকে ভীষণ দুঃখ লাগছিল। অন্যদিকে মনে হচ্ছিল, এই আমরা আজ যখন পুরো সময় লড়ে চলেছি, স্বাধীনতার পক্ষে, রাষ্ট্রের পক্ষে, ধর্মের পক্ষে, ভাবাদর্শের পক্ষে; এই লড়াই যেখানে আমরা কে ঠিক, কে ভুল সেই নিয়ে লড়ে যাই; এই ভারতের ভারতীরা বার বার চোখে আঙুল দিয়ে দেখায় আমাদের এই লড়াই কতটা প্রহসন; আমরা আসলে সবাই ভুল।
ভাবিয়া আর ভারতীরা আমার বাড়ির নিচেই থাকত। ভারতী শুনলাম আমার বাড়িওয়ালার বাড়িতে কাজ করে। ভাবিয়ার কাছে জানতে চাইলাম ঐ টুকু মেয়েকে কেন কাজে দিল, তাতে এমন ভাবে হাসল যেন প্রশ্নটি করাই আমার মুর্খামি। ভারতী মাঝে মাঝেই আমার বাড়িতে আসত দিদিকে ডাকতে বা কিছু বলতে। হাতের সামনে বিস্কিট, লজেন্স, কিছু থাকলেই দিতাম। একদিন সকালে ভাবিয়া চলে যাওয়ার মিনিট ১০ -এক বাদে এলো। আমাকে বলল দিদি ডাকছে। নিচে যেতে গেলে হেসে উঠে বলল "ভাইয়া, এপ্রিল ফুল।" বলেই জিভ কেটে নিয়ে বলল "সরি ভাইয়া।" ভীষণ অবাক হলাম। আমিও হেসে ফেললাম।
মাস ৩ এক বাদে ভাবিয়া এসে জানাল কিছু টাকা লাগবে, ভারতীর নাকি বিয়ে। চমকে জিজ্ঞেস করলাম কত বয়েস ভারতীর। জানতে পারলাম মাত্র ১৪। কেন এত অল্প বয়েসে বিয়ে জানতে চাইলে এবার ভাবিয়া বেশ বিরক্ত হল। আবার কিছু বলল কন্নড়ে যা আমি বুঝলাম না। যা বুঝলাম তা হল কেন ভারতী স্কুল ছেড়েছিল, আর কেনই বা দিদির কাছে এসে ছিল। তখনকার মত টাকা দিয়ে ভাবিয়া কে বিদায় দিলাম। এক বছর বাদে ভারতী আবার ফিরে এল, এবার স্বামীর সঙ্গে। তার স্বামী শুনলাম পাড়ার সুপারমার্কেটে নিরাপত্তাকর্মীর চাকরি পেয়েছে। ভারতী এবার পুরোদমে কাজে লেগে গেল আশেপাশের দু- তিনটে বাড়িতে। দেখা হতে লাগল আবার। একই রকম হাসিখুশি, যেন তেমন পাল্টায়নি তার জীবন। আমি ভেবে অবাক হতাম যে বয়েসে আমি সাইকেল করে টিউশান পড়তে যেতাম, সে বয়েসে ভারতী কি সুন্দর সংসার করছে।
কয়েক মাস আগে ভাবিয়া জানাল ভারতী গর্ভবতী। আস্তে আস্তে ভারতী কাজ করা বন্ধ করল। নিচেই থাকত। আমি অফিস যাওয়ার সময় দেখা হত। দিদি, জামাইবাবু, স্বামী সবাই কাজে চলে গেছে। ভারতী একা ঘরে রান্না করছে। আমাকে দেখে হেসে "বাই ভাইয়া" বলত। গত শনিবার থেকে দেখে ভাবিয়াদের বাড়ী বন্ধ। ভাবিয়াও কাজে আসে না। বাড়িওয়ালার কাছে গিয়ে জানলাম, ভারতীর সন্তান প্রসবের জন্য সবাই হাসপাতালে। তাই বলে সাতদিন? বেশ অবাক হয়েছিলাম। আজ বিকেলে পাশের বাড়ীর মহিলা জানালেন ভারতী আমাদের ছেড়ে চলে গেছে। রক্তের সমস্যা দেখা দিয়েছিল। ডাক্তারবাবু রক্ত দিলেও তা নিতে পারেনি ভারতী। সন্তান প্রসবের আগেই এই জগতের মায়া ত্যাগ করে।
খবরটা পাওয়া আর এই লেখাটার মাঝের সময়টা বেশ একটা অদ্ভুত মনের অবস্থার মধ্যে দিয়ে গেলাম। একদিকে ভীষণ দুঃখ লাগছিল। অন্যদিকে মনে হচ্ছিল, এই আমরা আজ যখন পুরো সময় লড়ে চলেছি, স্বাধীনতার পক্ষে, রাষ্ট্রের পক্ষে, ধর্মের পক্ষে, ভাবাদর্শের পক্ষে; এই লড়াই যেখানে আমরা কে ঠিক, কে ভুল সেই নিয়ে লড়ে যাই; এই ভারতের ভারতীরা বার বার চোখে আঙুল দিয়ে দেখায় আমাদের এই লড়াই কতটা প্রহসন; আমরা আসলে সবাই ভুল।