Tuesday, February 9, 2016

এক হপ্তা পরে

"কি বলল ডাক্তারবাবু?"
"খুব বেশি হলে আর এক সপ্তাহ।"
"মেসোমশাই এখন কথা বলতে পারছেন?"
"ধুর, চোখই খুলছে না সেভাবে, কথা বলা।"
"হুম। ধরা পড়েছিল যেন কবে? দু বছর আগে, তাই না?"
"হ্যাঁ, প্রায় আড়াই। ডাক্তারবাবু সেটাই বলছিলেন, উনি দেখেননি কাউকে এত দিন টিকে থাকতে। যাকগে, ছাদে চল।"
"চল।"
"একটা ফ্লেক দে তো।"
"এই নে।"
"আর এক সপ্তাহ..."
"দেখ যদি কোনভাবে..."
"সান্ত্বনা দিস না। জানিস, বাবা চলে গেলে কোন জিনিসটা সবচেয়ে মিস করব?"
"এটা বোধহয় জানি। তোকে তো গত কুড়ি বছর ধরে দেখছি। ঐ তুই ক্লান্ত থাকলে মেসোমশাই এসে তোর মাথায় হাত বুলিয়ে দিতেন। মনে আছে সেই স্কুলে পড়তে ক্রিকেট খেলে এসে তুই সোফায় পড়ে হাঁপাতিস, আর মেসোমশাই তোর মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছিলেন। আমি সামনে ছিলাম বলে তুই লজ্জা পেয়ে গেছিলি। বারণ করলি ওনাকে। এ ছাড়াও বহুবার দেখেছি; মনে আছে সেই পুরী বেড়াতে গিয়ে..."
"থাম, ওটা না। আমি সবচেয়ে মিস করব বাবার ওপর চেঁচানোটা।"
"চেঁচানো?"
"হ্যাঁ, যখনই বাবা কিছু ভুল করত, কিছু পারত না, আমি ভীষণ চেঁচাতাম। ঝগড়া বলব না, কারণ বাবা কদাচিৎ চেঁচাত। আমিই রেগে যেতাম। সবচেয়ে হাস্যকর কি জানিস? অনেক সময় আমার নিজের ভুল, বাবার নামে দোষ দিয়ে চেঁচাতাম। যেন তাতে একটা সান্ত্বনা পাওয়া যেত যে আমি কোন ভুল করিনি। আশ্চর্যজনক ভাবে বাবাও যেন সেগুলো মেনে নিত, যে দোষটা বাবারই। লোকে বলে না মাথার ওপর একটা ছাদ সরে যায়; এখন বুঝছি, নিজের ভুলের হিসেব নিজেকেই দিতে হবে রে, কাউকে আর দায়ী করতে পারব না।"




8 comments: