সালটা ২০০১। টেস্ট পরীক্ষা চলছে। অঙ্ক পরীক্ষার আগে বাবা বলে দিলেন -- "৮০ পেতেই হবে। নইলে বিজয়বাবু নেবেন না।" তখন বিজয়বাবুর নাম প্রথম শোনা। শ্রী বিজয় রায়। বর্ধমানের রামকৃষ্ণ স্কুলের অঙ্কের শিক্ষক। ওনার কাছে পড়লে নাকি জয়েন্ট নিশ্চিত। আমাদের পাড়ার অন্তুদা, বাপিদারা নাকি ওনার কাছেই পড়েছিল। তা অঙ্কে ৮০-র উপরই পেয়েছিলাম।
২০০১ এর মার্চ মাসে যেদিন হরভজন সিংহের বলে ম্যাকগ্রাথ এল বি হলেন আর সারা কলকাতা আনন্দে মেতে উঠল, সেদিন আমার আই সি এস ই পরীক্ষা শেষ হয়। পরেরদিন সকালে জলখাবার খেয়ে আমি আর বাবা গেলাম বিজয়বাবুর বাড়ি। আমাদের পাড়ার কাছেই থাকেন। তাই হেঁটে হেঁটেই গেলাম। কোন বাড়িটা জানতাম না, তাই একজনকে জিজ্ঞেস করে নিলাম। বাড়ির দরজা খোলাই ছিল। উনি নিচে আর একজন ছাত্র আর তার বাবার সঙ্গে কথা বলছিলেন। পরে জেনেছি সেটি শঙ্খজিৎ। প্রথম দেখলাম ভদ্রলোককে। সাধারণ চেহারা। সাদা পাঞ্জাবী-পাজামা পরিহিত। হাতে চশমা ধরে আছেন। আমাকে বললেন -- "এতদিন কার কাছে পড়তে?" কথা হল এপ্রিল থেকে ব্যাচ বসবে।
সেই শুরু। পরের দু'বছর চলল এক অসাধারণ সম্পর্ক। অঙ্ক করাতে করাতে বার বার মজা করতেন। কোন অঙ্ক বাজে লজিক দিয়ে মিলিয়ে দিলে -- "গ্যাটিস দিচ্ছ?" কোন অঙ্ক নিয়ে অনেকক্ষণ বসে থাকলে -- "পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা?" কোন অঙ্ক পারলে আনন্দ করলে বলতেন -- "জে ই তে উড়িয়ে দেবে তো?" মাঝে মাঝে পড়াশুনোর বাইরেও কথা বলতেন। মারাত্মক মারাদোনা ভক্ত ছিলেন। বলতেন -- "আজকাল তোমরা সব জিদান জিদান করো, কিন্তু মারাদোনার পাশে কেউ না।"
ট্রিগোনোমেট্রি থেকে ইন্টিগ্রেশন, এত মন দিয়ে এত ভালোভাবে আর কেউ পড়াতে পারতেন কিনে জানি না। জয়েন্টের আগে বলেছিলান -- "মাঠা ঠাণ্ডা রেখো, ঠিক পারবে।" মনে আছে জয়েন্টের রেজাল্ট বেরোনোর পর গেছি। দেখি উল্টোদিকে আর একজন বসে আছে। আমাকে আলাপ করালেন -- "এই হল শ্রেয়স, গত বছর যাদবপুর জয়েন করেছে। শ্রেয়স, ভাইকে সাহায্য কর।"
শেষ দেখা হয়েছিল বিয়ের নেমতন্ন করতে যাওয়ার দিন, সাড়ে তিন বছর আগে। শুনলাম স্কুল থেকে অবসর নিয়েছেন। আর টিউশান পড়াননা। গলার অবস্থা ভালো না। আজ ধীমান জানালো বিজয়বাবু আর নেই। গত পরশু ওনার হার্ট এট্যাক হয়। শুধু আমি কেন, বর্ধমানের অগুনতি ছেলে মেয়ের ভবিষ্যত তৈরি করে দিয়েছেলেন বিজয়বাবু। এক যুগের অবসান।
২০০১ এর মার্চ মাসে যেদিন হরভজন সিংহের বলে ম্যাকগ্রাথ এল বি হলেন আর সারা কলকাতা আনন্দে মেতে উঠল, সেদিন আমার আই সি এস ই পরীক্ষা শেষ হয়। পরেরদিন সকালে জলখাবার খেয়ে আমি আর বাবা গেলাম বিজয়বাবুর বাড়ি। আমাদের পাড়ার কাছেই থাকেন। তাই হেঁটে হেঁটেই গেলাম। কোন বাড়িটা জানতাম না, তাই একজনকে জিজ্ঞেস করে নিলাম। বাড়ির দরজা খোলাই ছিল। উনি নিচে আর একজন ছাত্র আর তার বাবার সঙ্গে কথা বলছিলেন। পরে জেনেছি সেটি শঙ্খজিৎ। প্রথম দেখলাম ভদ্রলোককে। সাধারণ চেহারা। সাদা পাঞ্জাবী-পাজামা পরিহিত। হাতে চশমা ধরে আছেন। আমাকে বললেন -- "এতদিন কার কাছে পড়তে?" কথা হল এপ্রিল থেকে ব্যাচ বসবে।
সেই শুরু। পরের দু'বছর চলল এক অসাধারণ সম্পর্ক। অঙ্ক করাতে করাতে বার বার মজা করতেন। কোন অঙ্ক বাজে লজিক দিয়ে মিলিয়ে দিলে -- "গ্যাটিস দিচ্ছ?" কোন অঙ্ক নিয়ে অনেকক্ষণ বসে থাকলে -- "পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা?" কোন অঙ্ক পারলে আনন্দ করলে বলতেন -- "জে ই তে উড়িয়ে দেবে তো?" মাঝে মাঝে পড়াশুনোর বাইরেও কথা বলতেন। মারাত্মক মারাদোনা ভক্ত ছিলেন। বলতেন -- "আজকাল তোমরা সব জিদান জিদান করো, কিন্তু মারাদোনার পাশে কেউ না।"
ট্রিগোনোমেট্রি থেকে ইন্টিগ্রেশন, এত মন দিয়ে এত ভালোভাবে আর কেউ পড়াতে পারতেন কিনে জানি না। জয়েন্টের আগে বলেছিলান -- "মাঠা ঠাণ্ডা রেখো, ঠিক পারবে।" মনে আছে জয়েন্টের রেজাল্ট বেরোনোর পর গেছি। দেখি উল্টোদিকে আর একজন বসে আছে। আমাকে আলাপ করালেন -- "এই হল শ্রেয়স, গত বছর যাদবপুর জয়েন করেছে। শ্রেয়স, ভাইকে সাহায্য কর।"
শেষ দেখা হয়েছিল বিয়ের নেমতন্ন করতে যাওয়ার দিন, সাড়ে তিন বছর আগে। শুনলাম স্কুল থেকে অবসর নিয়েছেন। আর টিউশান পড়াননা। গলার অবস্থা ভালো না। আজ ধীমান জানালো বিজয়বাবু আর নেই। গত পরশু ওনার হার্ট এট্যাক হয়। শুধু আমি কেন, বর্ধমানের অগুনতি ছেলে মেয়ের ভবিষ্যত তৈরি করে দিয়েছেলেন বিজয়বাবু। এক যুগের অবসান।
No comments:
Post a Comment