আজকে বাইরে একটা মিষ্টি হাওয়া দিচ্ছে। এই বাংলো বাড়িটার সামনে একটা ছোট বাগান। বাগানের মধ্যে দিয়ে লাল সুড়কির রাস্তা। দু'ধারে ছোট ছোট গাছ করেছেন রুকুর মা সাধনাদেবী। বাগান শেষ হয় একটি বেড়ায়। বেড়ার মাঝে লোহার গেট। রুকুর ঐ গেটের বাইরে যাওয়া মানা। সুকুর সাথে খেলতে গিয়ে বলটা বাইরে চলে গেলেও রুকু বাইরে যেতে পারেনা। বাড়িতে মাকে গিয়ে বললে মা এনে দেন। আসলে বাইরে বড় রাস্তা। মাঝে মাঝেই সেখান দিয়ে বড় লরি যায়।
সুকু হল রুকুর পোষা ল্যাব্রাডর। রোজ বিকেলে শুকুর সাথে এখানে খেলতে আসে রুকু। এ অঞ্চলে ওর আর কোন বন্ধু নেই। ওদের এই বাংলো বাড়িটা খুব সুন্দর। ওপরে আবার একটা চিমনি আছে। ওটা যদিও মিছিমিছি। মানে কাজ হয়না ওতে। বাংলো বাড়ি থেকে একটু দূরেই ট্রেন লাইন। এই অঞ্চলে খুব বেশী ট্রেন আসেনা। তবে রাত্রে মাঝে মাঝে ট্রেন এলে এই বাড়ি থেকেই আওয়াজ শোনা যায়। এই পাহাড়ি অঞ্চলে লোকজন বেশী নেই। তাই রাতের দিকে ট্রেনের আওয়াজ বড় স্পষ্ট। মনে পড়ে বছর দুয়েক আগে এই ট্রেনের আওয়াজে মাঝে মাঝেই ঘুম ভেঙ্গে যেত রুকুর।
বলা হয়নি, ঐ বেড়ার পাশেই একটা বড় গাছ আছে। কি গাছ সেটা অবশ্য রুকু জানেনা। গরমের দিনে মাঝে মাঝে এর ছায়াতে বসে পড়ে সুকু। তখন ওর গায়ে হাত বোলাতে বোলাতে গান করে রুকু। রুকুর মা খুব ভালো গান জানেন। উনি রুকুকে গান শেখান। সে কত গান। "ছোট পাখি চন্দনা", "আতা গাছে তোতা পাখি", আরো কত গান। সুকু খুব আদর খেতে ভালোবাসে। আদর করলেই নিজের লেজ নাড়াতে থাকে।
বাংলো বাড়ির জানালা দিয়ে রুকুর মা সাধনাদেবী ওদের দেখছিলেন। ওনার দৃষ্টি একটু অদ্ভুত। কেমন যেন সম্মোহিত হয়ে পড়েছেন মনে হবে। এক দৃষ্টিতে মেয়েকে দেখছেন। যেন মেয়ের উপর থেকে চোখ সরাতে পারছেন না। একটু বাদেই সূর্য ডুবল। তখন চাঁপা ফুলের গন্ধে, ট্রেনের আওয়াজে, ফড়িং-এর ভনভনানিতে, আকাশের লাল রঙে আর সদ্য ওঠা চাঁদের আলোয় বাংলো বাড়িটিকে এক রূপকথার পরিবেশে রুপান্তিরত করেছিল। এবার বাড়ি ফেরার পালা। রুকু সুকুকে নিয়ে বাড়ি এল।
বাড়ি ফিরতেই মা বকলেন জামা নোংরা করেছে বলে। "যাও, এক্ষুনি নোংরা জামাটা পাল্টে কাপড় কাচার জায়গায় রেখে এসো। কাল লক্ষ্মী কেচে দেবে।"
রুকু ঘরে যেতেই দীর্ঘশ্বাস ফেললেন সাধনাদেবী। মেয়েটার কি হয়েছে কে জানে? কতবার স্বামীকে বলেছেন কলকাতা নিয়ে গিয়ে ভালো ডাক্তার দেখাতে। কিন্তু তাঁর স্বামী চিত্তবাবু কিছুতেই রাজি হন না। উনি যেন বিশ্বাসই করেন না রুকুর অসুখ আছে। অথচ সাধনাদেবী পরিষ্কার বুঝতে পারেন। আজ থেকে দু'বছর আগে সুকু মারা গেছে। খেলতে খেলতে বল বড় রাস্তায় পড়ে গিয়েছিল। সুকু বেড়া ডিঙ্গিয়ে বল আনতে যায়। একটি লরি এসে চাপা দিয়ে যায় সুকুকে। অথচ রুকু রোজ বলে ও নাকি সুকুর সাথে বিকেলে খেলতে যায়। আর পেরে উঠছেন না সাধনাদেবী। ওনার স্বামী বা শাশুড়ি কারুরই যেন এতে কিছু যায় আসেনা।
আজকেও বাইরের ঘরে গিয়ে দেখলেন মা-ছেলে বসে আছে। তাঁর শাশুড়ি এক মনে উল বুনছেন। আর চিত্তবাবু পেপার পড়ছেন। সাধনাদেবী বললেন -- "রুকু আজকেও জামা নোংরা করে এসেছে। বলছে নাকি সুকুর সাথে খেলতে গিয়ে এই হয়েছে। তুমি কিছু বলবে না?"
"বাচ্চা মেয়ে, আদরের বন্ধুকে ছাড়তে পারছে না। তুমি এতো চিন্তা করোনা। তোমাকে তো বলেছি, বড় হলেই ঠিক হয়ে যাবে।"
"দেখ এভাবে বেশীদিন ফেলে রাখা ভালো না। আর কয়েক মাসের মধ্যে না কমলে কিন্তু যেতেই হবে। তুমি না গেলে আমি একা নিয়ে যাব।"
"আচ্ছা, বেশ। কয়েক মাস দেখতে দাও।"
সাধনাদেবী রান্নাঘরে যেতেই নিজের মায়ের দিকে চাইলেন চিত্তবাবু। ক্লান্ত চোখে হতাশ দৃষ্টি ফেলে বললেন -- "কি করি বলো তো মা? দু' বছর আগে রুকুটাও কুকুরটার সাথেই চলে গেল। অথচ আজকেও ও মেয়েটার জামা পালটায়।"
সুকু হল রুকুর পোষা ল্যাব্রাডর। রোজ বিকেলে শুকুর সাথে এখানে খেলতে আসে রুকু। এ অঞ্চলে ওর আর কোন বন্ধু নেই। ওদের এই বাংলো বাড়িটা খুব সুন্দর। ওপরে আবার একটা চিমনি আছে। ওটা যদিও মিছিমিছি। মানে কাজ হয়না ওতে। বাংলো বাড়ি থেকে একটু দূরেই ট্রেন লাইন। এই অঞ্চলে খুব বেশী ট্রেন আসেনা। তবে রাত্রে মাঝে মাঝে ট্রেন এলে এই বাড়ি থেকেই আওয়াজ শোনা যায়। এই পাহাড়ি অঞ্চলে লোকজন বেশী নেই। তাই রাতের দিকে ট্রেনের আওয়াজ বড় স্পষ্ট। মনে পড়ে বছর দুয়েক আগে এই ট্রেনের আওয়াজে মাঝে মাঝেই ঘুম ভেঙ্গে যেত রুকুর।
বলা হয়নি, ঐ বেড়ার পাশেই একটা বড় গাছ আছে। কি গাছ সেটা অবশ্য রুকু জানেনা। গরমের দিনে মাঝে মাঝে এর ছায়াতে বসে পড়ে সুকু। তখন ওর গায়ে হাত বোলাতে বোলাতে গান করে রুকু। রুকুর মা খুব ভালো গান জানেন। উনি রুকুকে গান শেখান। সে কত গান। "ছোট পাখি চন্দনা", "আতা গাছে তোতা পাখি", আরো কত গান। সুকু খুব আদর খেতে ভালোবাসে। আদর করলেই নিজের লেজ নাড়াতে থাকে।
বাংলো বাড়ির জানালা দিয়ে রুকুর মা সাধনাদেবী ওদের দেখছিলেন। ওনার দৃষ্টি একটু অদ্ভুত। কেমন যেন সম্মোহিত হয়ে পড়েছেন মনে হবে। এক দৃষ্টিতে মেয়েকে দেখছেন। যেন মেয়ের উপর থেকে চোখ সরাতে পারছেন না। একটু বাদেই সূর্য ডুবল। তখন চাঁপা ফুলের গন্ধে, ট্রেনের আওয়াজে, ফড়িং-এর ভনভনানিতে, আকাশের লাল রঙে আর সদ্য ওঠা চাঁদের আলোয় বাংলো বাড়িটিকে এক রূপকথার পরিবেশে রুপান্তিরত করেছিল। এবার বাড়ি ফেরার পালা। রুকু সুকুকে নিয়ে বাড়ি এল।
বাড়ি ফিরতেই মা বকলেন জামা নোংরা করেছে বলে। "যাও, এক্ষুনি নোংরা জামাটা পাল্টে কাপড় কাচার জায়গায় রেখে এসো। কাল লক্ষ্মী কেচে দেবে।"
রুকু ঘরে যেতেই দীর্ঘশ্বাস ফেললেন সাধনাদেবী। মেয়েটার কি হয়েছে কে জানে? কতবার স্বামীকে বলেছেন কলকাতা নিয়ে গিয়ে ভালো ডাক্তার দেখাতে। কিন্তু তাঁর স্বামী চিত্তবাবু কিছুতেই রাজি হন না। উনি যেন বিশ্বাসই করেন না রুকুর অসুখ আছে। অথচ সাধনাদেবী পরিষ্কার বুঝতে পারেন। আজ থেকে দু'বছর আগে সুকু মারা গেছে। খেলতে খেলতে বল বড় রাস্তায় পড়ে গিয়েছিল। সুকু বেড়া ডিঙ্গিয়ে বল আনতে যায়। একটি লরি এসে চাপা দিয়ে যায় সুকুকে। অথচ রুকু রোজ বলে ও নাকি সুকুর সাথে বিকেলে খেলতে যায়। আর পেরে উঠছেন না সাধনাদেবী। ওনার স্বামী বা শাশুড়ি কারুরই যেন এতে কিছু যায় আসেনা।
আজকেও বাইরের ঘরে গিয়ে দেখলেন মা-ছেলে বসে আছে। তাঁর শাশুড়ি এক মনে উল বুনছেন। আর চিত্তবাবু পেপার পড়ছেন। সাধনাদেবী বললেন -- "রুকু আজকেও জামা নোংরা করে এসেছে। বলছে নাকি সুকুর সাথে খেলতে গিয়ে এই হয়েছে। তুমি কিছু বলবে না?"
"বাচ্চা মেয়ে, আদরের বন্ধুকে ছাড়তে পারছে না। তুমি এতো চিন্তা করোনা। তোমাকে তো বলেছি, বড় হলেই ঠিক হয়ে যাবে।"
"দেখ এভাবে বেশীদিন ফেলে রাখা ভালো না। আর কয়েক মাসের মধ্যে না কমলে কিন্তু যেতেই হবে। তুমি না গেলে আমি একা নিয়ে যাব।"
"আচ্ছা, বেশ। কয়েক মাস দেখতে দাও।"
সাধনাদেবী রান্নাঘরে যেতেই নিজের মায়ের দিকে চাইলেন চিত্তবাবু। ক্লান্ত চোখে হতাশ দৃষ্টি ফেলে বললেন -- "কি করি বলো তো মা? দু' বছর আগে রুকুটাও কুকুরটার সাথেই চলে গেল। অথচ আজকেও ও মেয়েটার জামা পালটায়।"
No comments:
Post a Comment