"আজ ক্লাস হবে না? শিওর?"
"হ্যাঁ রে ভাই, আজ আর ক্লাস নেই। আমরা বিকেলে নবীনায় ধুম দেখতে যাচ্ছি। যাবি? শুনলাম দারুণ হয়েছে।"
"না, ধুর।"
"বাড়ি যাবি?"
"ভাবছি।"
"১ টা বাজে তো? হবে তোর?"
"হয়ে যাবে।"
মিনিট ১৫ বাদে হস্টেল থেকে ব্যাগটা নিয়ে বেরোল সুদেব। মনে করে ব্যাগে ভরে নিল নতুন কেনা পেন্সিল ব্যাটারির টর্চটা। ওটি আজ একান্ত জরুরি। কলকাতা আসার পর থেকে কোনদিন সে এর'ম সময় বাড়ি যায়নি। সবসময় সকালেই যায়। আজ যাবে। একটা সুযোগ যখন এসে গেছে...।
৮ বি তে পৌঁছিয়ে প্রথমেই একটু পেট-পুজো করে নিল সুদেব। বাসস্ট্যান্ডের পিছনে একটা ছোট ভাত খাওয়ার দোকান। মূলত বাস ড্রাইভাররা সেখানে আহার সারেন। সুদেব আগে কয়েকবার খেয়েছে এখানে। ইউনিভার্সিটির সি ই টি ক্যান্টিনের চেয়ে এখানে খাওয়াটা অনেকটাই ভালো। আর দামের ফারাকও সামান্যই।
"কি দেব?"
"মাছ কি আছে?"
"রুই আর পাবদা।"
"না থাক, ডিম ভাত দাও।"
"একটা ডিম ভাত, ৫ নম্বরে।"
খেয়ে দেয়ে ম্যানেজারকে দাম মিটিয়ে একটু মৌরি মুখে পুরে অপেক্ষারত সবুজ রঙের ই ওয়ান বাসে উঠে জানালার ধারে বসল সুদেব। ফাঁকা বাস। পাশের সিটে কেউ নেই দেখে ব্যাগটা পাশেই রাখল। মিনিট দশেকের মধ্যেই বাস চালু হল। যাদবপুর থানা পেড়োতে না পেড়োতেই কন্ডাক্টার এসে দশ টাকার টিকিট কেটে নিলেন। এই ই ওয়ান বাসের ভাড়াটা বেশী বটে, তবে সবচেয়ে তাড়াতাড়ি হাওড়া যাওয়া যায়। গোলপার্কের কাছটা বেশ জ্যাম পেল সুদেব। আসলে কাল ষষ্টি, লোকে এরমধ্যেই রাস্তায় নেমে পড়েছে। ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা রঙ্গিন জামাকাপড় পরে মা বাবার হাত ধরে প্রতিমা দর্শনে বেড়িয়ে পড়েছে। রাস্তায় বড় বড় বিলবোর্ড সেসব পুজোর প্রচারে। গতবছর কলকাতায় যখন প্রথম এলো, সুদেব শুনেছিল এখানে নাকি একটা প্রতিযোগিতা হয় কার পুজো সবচেয়ে ভালো তাই নিয়ে। আর কত পুজো। প্রতি গলিতেই যেন পুজো চলছে। সত্যি, কলকাতাটা কত আলাদা।
প্রায় দেড় ঘণ্টা সময় নিল ই ওয়ান হাওড়া পৌঁছাতে। এত দেরি হয়না। কিন্তু পুজোর ভিড়ে কলকাতার অবস্থা পুরো পাল্টে যায়। মান্থলি করাই আছে, চারটে পাঁচের কর্ড লাইন বর্ধমান লোকাল ধরল সুদেব। ট্রেনএ যথেষ্ট ভিড়, সবাই আজ যেন সাত তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরতে চায়। কোনরকমে একটা সিট পেল সুদেব। যদিও এবার আর জানালার হাওয়া খেতে খেতে যেতে পারবে না। ব্যাগটা কোলের কাছে ধরে বসল। এতই ভিড় কামড়ায় যে হকাররাও উঠছে না। অবশেষে কামার কুণ্ডু থেকে ভিড় কমতে থাকল। চন্দনপুর এলে এক চা-ওয়ালার থেকে এক কাপ চা কিনল সুদেব। এই নেশাটা কলকাতা আসার পড় শুরু হয়েছে তার। বাড়িতে ফিরে অভ্যাস বদলাতে হবে।
ট্রেন যখন বর্ধমানে এলো তখন সোয়া ছ'টা বাজে। এবার যেতে হবে তিনকোনিয়া বাসস্ট্যান্ড। অন্যদিন হলে হেঁটেই চলে যায় সুদেব। কিন্তু আজ তাড়া আছে। একটা রিক্সা করতে হবে। ওভারব্রিজ থেকে নামতেই ছেঁকে ধরল রিক্সাওয়ালারা।
"কোথায় যাবেন বাবু?"
"রিক্সা লাগবে।"
এখানে যে কেন কলকাতার মত অটো হয়না। অবশেষে দরাদরি করে একটা রিক্সা পেল সুদেব। মিনিট পাঁচেকের মধ্যেই তিনকোনিয়া। বড়শুল যাওয়ার বাস ছাড়ল একটু বাদেই।
"কোথায় যাবেন?" কন্ডাক্টার জানতে চাইলেন।
"রতনের দোকান।"
"সামনে চলে আসবেন, বাস এমনি দাঁড়ায় না।"
সুদেবের হাতে টিকিট দিয়ে পরিষ্কার জানাল কন্ডাক্টার।
"জানি।"
সাড়ে সাতটার একটু পরেই রতনের দোকানের সামনে নামল সুদেব। রতনদা ঝাঁপ ফেলে দিয়েছে দোকানের। সুদবদের গ্রামে বাস স্টপ নেই। এই রতনের দোকানের সামনে থেকে যেতে হয়। দিনের বেলা তবু ভ্যান রিক্সা পাওয়া যায়। এখন কিছুই নেই। এবার ব্যাগ থেকে নিজের পেন্সিল ব্যাটারির টর্চটা বার করল সুদেব। তারপর শুরু হল তার পথ চলা। দেড় মাইল মত রাস্তা। আধ ঘণ্টার বেশী লাগার কথা না। প্রথমে পাকা রাস্তা দিয়ে খানিকক্ষণ আর তারপর আল। আলের ওপর দিয়ে সাবধানে হাঁটতে হাঁটতে ভয় পেতে শুরু করল সুদেব। চারধারে কেউ নেই। দূরে কাগতাড়ুয়াটাকে দেখে কেমন যেন গা ছমছম করছে। মনটা অন্যদিকে নিয়ে যেতে চাইল সে। ভাবতে লাগল পুজোর কথা। কলকাতায় কত পুজো দেখে এলো। অথচ তাদের গ্রামে পুজোই হয়না। পাশের মধুপুর হাটে একটা পুজো হয়, গ্রামের সবাই সেখানেই যায়। সারাবছরের সঙ্গে এই সময়ের সন্ধ্যাগুলোর কোন ফারাক নেই তাদের গ্রামে। ঢাকের শব্দ শোনা যায়না, মাইকে গানও বাজে না, লোকের ভিড়ও থাকে না। গতবছরও ছুটিতে বাড়ি চলে এসেছিল সুদেব। এবছর ভেবেছিল কলকাতার পুজো দেখবে। কিন্তু যেই শোনা ছুটি পড়েছে, যাদবপুরের ওই চার দেওয়ালের ঘরে আর থাকতে ইচ্ছে করল না তার। আদৌ কি কোনদিন কলকাতার পুজো দেখা হবে সুদেবের!! চাকরি পেলে একবার মা বাবাকে নিয়ে কলকাতায় থাকবে সে। কলকাতার পুজো দেখবে সবাই মিলে।
এইসব ভাবনার মধ্যে সামনে তাকাতেই এবার নজরে পড়ল তাদের গ্রাম। আর ওইতো তাদের বাড়ি। এখনো গ্রামে ইলেক্ট্রিসিটি আসেনি, তাই বাড়িতে মা লন্ঠন জ্বালিয়ে রাখেন। এত দূর থেকে সেই লন্ঠনের আলো চোখে পড়ে মনটা খুশিতে নেচে উঠল সুদেবের। এক মুহূর্তে ভুলে গেল গোলপার্কের ভিড়, পুজোর বিলবোর্ড, ঢাকের আওয়াজ।
আসলে পুজোর সময় শুধু যে মা সন্তানের কাছে আসেন তা নয়, মাঝে মাঝে সন্তানও মায়ের কাছে ফেরে।
"হ্যাঁ রে ভাই, আজ আর ক্লাস নেই। আমরা বিকেলে নবীনায় ধুম দেখতে যাচ্ছি। যাবি? শুনলাম দারুণ হয়েছে।"
"না, ধুর।"
"বাড়ি যাবি?"
"ভাবছি।"
"১ টা বাজে তো? হবে তোর?"
"হয়ে যাবে।"
মিনিট ১৫ বাদে হস্টেল থেকে ব্যাগটা নিয়ে বেরোল সুদেব। মনে করে ব্যাগে ভরে নিল নতুন কেনা পেন্সিল ব্যাটারির টর্চটা। ওটি আজ একান্ত জরুরি। কলকাতা আসার পর থেকে কোনদিন সে এর'ম সময় বাড়ি যায়নি। সবসময় সকালেই যায়। আজ যাবে। একটা সুযোগ যখন এসে গেছে...।
৮ বি তে পৌঁছিয়ে প্রথমেই একটু পেট-পুজো করে নিল সুদেব। বাসস্ট্যান্ডের পিছনে একটা ছোট ভাত খাওয়ার দোকান। মূলত বাস ড্রাইভাররা সেখানে আহার সারেন। সুদেব আগে কয়েকবার খেয়েছে এখানে। ইউনিভার্সিটির সি ই টি ক্যান্টিনের চেয়ে এখানে খাওয়াটা অনেকটাই ভালো। আর দামের ফারাকও সামান্যই।
"কি দেব?"
"মাছ কি আছে?"
"রুই আর পাবদা।"
"না থাক, ডিম ভাত দাও।"
"একটা ডিম ভাত, ৫ নম্বরে।"
খেয়ে দেয়ে ম্যানেজারকে দাম মিটিয়ে একটু মৌরি মুখে পুরে অপেক্ষারত সবুজ রঙের ই ওয়ান বাসে উঠে জানালার ধারে বসল সুদেব। ফাঁকা বাস। পাশের সিটে কেউ নেই দেখে ব্যাগটা পাশেই রাখল। মিনিট দশেকের মধ্যেই বাস চালু হল। যাদবপুর থানা পেড়োতে না পেড়োতেই কন্ডাক্টার এসে দশ টাকার টিকিট কেটে নিলেন। এই ই ওয়ান বাসের ভাড়াটা বেশী বটে, তবে সবচেয়ে তাড়াতাড়ি হাওড়া যাওয়া যায়। গোলপার্কের কাছটা বেশ জ্যাম পেল সুদেব। আসলে কাল ষষ্টি, লোকে এরমধ্যেই রাস্তায় নেমে পড়েছে। ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা রঙ্গিন জামাকাপড় পরে মা বাবার হাত ধরে প্রতিমা দর্শনে বেড়িয়ে পড়েছে। রাস্তায় বড় বড় বিলবোর্ড সেসব পুজোর প্রচারে। গতবছর কলকাতায় যখন প্রথম এলো, সুদেব শুনেছিল এখানে নাকি একটা প্রতিযোগিতা হয় কার পুজো সবচেয়ে ভালো তাই নিয়ে। আর কত পুজো। প্রতি গলিতেই যেন পুজো চলছে। সত্যি, কলকাতাটা কত আলাদা।
প্রায় দেড় ঘণ্টা সময় নিল ই ওয়ান হাওড়া পৌঁছাতে। এত দেরি হয়না। কিন্তু পুজোর ভিড়ে কলকাতার অবস্থা পুরো পাল্টে যায়। মান্থলি করাই আছে, চারটে পাঁচের কর্ড লাইন বর্ধমান লোকাল ধরল সুদেব। ট্রেনএ যথেষ্ট ভিড়, সবাই আজ যেন সাত তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরতে চায়। কোনরকমে একটা সিট পেল সুদেব। যদিও এবার আর জানালার হাওয়া খেতে খেতে যেতে পারবে না। ব্যাগটা কোলের কাছে ধরে বসল। এতই ভিড় কামড়ায় যে হকাররাও উঠছে না। অবশেষে কামার কুণ্ডু থেকে ভিড় কমতে থাকল। চন্দনপুর এলে এক চা-ওয়ালার থেকে এক কাপ চা কিনল সুদেব। এই নেশাটা কলকাতা আসার পড় শুরু হয়েছে তার। বাড়িতে ফিরে অভ্যাস বদলাতে হবে।
ট্রেন যখন বর্ধমানে এলো তখন সোয়া ছ'টা বাজে। এবার যেতে হবে তিনকোনিয়া বাসস্ট্যান্ড। অন্যদিন হলে হেঁটেই চলে যায় সুদেব। কিন্তু আজ তাড়া আছে। একটা রিক্সা করতে হবে। ওভারব্রিজ থেকে নামতেই ছেঁকে ধরল রিক্সাওয়ালারা।
"কোথায় যাবেন বাবু?"
"রিক্সা লাগবে।"
এখানে যে কেন কলকাতার মত অটো হয়না। অবশেষে দরাদরি করে একটা রিক্সা পেল সুদেব। মিনিট পাঁচেকের মধ্যেই তিনকোনিয়া। বড়শুল যাওয়ার বাস ছাড়ল একটু বাদেই।
"কোথায় যাবেন?" কন্ডাক্টার জানতে চাইলেন।
"রতনের দোকান।"
"সামনে চলে আসবেন, বাস এমনি দাঁড়ায় না।"
সুদেবের হাতে টিকিট দিয়ে পরিষ্কার জানাল কন্ডাক্টার।
"জানি।"
সাড়ে সাতটার একটু পরেই রতনের দোকানের সামনে নামল সুদেব। রতনদা ঝাঁপ ফেলে দিয়েছে দোকানের। সুদবদের গ্রামে বাস স্টপ নেই। এই রতনের দোকানের সামনে থেকে যেতে হয়। দিনের বেলা তবু ভ্যান রিক্সা পাওয়া যায়। এখন কিছুই নেই। এবার ব্যাগ থেকে নিজের পেন্সিল ব্যাটারির টর্চটা বার করল সুদেব। তারপর শুরু হল তার পথ চলা। দেড় মাইল মত রাস্তা। আধ ঘণ্টার বেশী লাগার কথা না। প্রথমে পাকা রাস্তা দিয়ে খানিকক্ষণ আর তারপর আল। আলের ওপর দিয়ে সাবধানে হাঁটতে হাঁটতে ভয় পেতে শুরু করল সুদেব। চারধারে কেউ নেই। দূরে কাগতাড়ুয়াটাকে দেখে কেমন যেন গা ছমছম করছে। মনটা অন্যদিকে নিয়ে যেতে চাইল সে। ভাবতে লাগল পুজোর কথা। কলকাতায় কত পুজো দেখে এলো। অথচ তাদের গ্রামে পুজোই হয়না। পাশের মধুপুর হাটে একটা পুজো হয়, গ্রামের সবাই সেখানেই যায়। সারাবছরের সঙ্গে এই সময়ের সন্ধ্যাগুলোর কোন ফারাক নেই তাদের গ্রামে। ঢাকের শব্দ শোনা যায়না, মাইকে গানও বাজে না, লোকের ভিড়ও থাকে না। গতবছরও ছুটিতে বাড়ি চলে এসেছিল সুদেব। এবছর ভেবেছিল কলকাতার পুজো দেখবে। কিন্তু যেই শোনা ছুটি পড়েছে, যাদবপুরের ওই চার দেওয়ালের ঘরে আর থাকতে ইচ্ছে করল না তার। আদৌ কি কোনদিন কলকাতার পুজো দেখা হবে সুদেবের!! চাকরি পেলে একবার মা বাবাকে নিয়ে কলকাতায় থাকবে সে। কলকাতার পুজো দেখবে সবাই মিলে।
এইসব ভাবনার মধ্যে সামনে তাকাতেই এবার নজরে পড়ল তাদের গ্রাম। আর ওইতো তাদের বাড়ি। এখনো গ্রামে ইলেক্ট্রিসিটি আসেনি, তাই বাড়িতে মা লন্ঠন জ্বালিয়ে রাখেন। এত দূর থেকে সেই লন্ঠনের আলো চোখে পড়ে মনটা খুশিতে নেচে উঠল সুদেবের। এক মুহূর্তে ভুলে গেল গোলপার্কের ভিড়, পুজোর বিলবোর্ড, ঢাকের আওয়াজ।
আসলে পুজোর সময় শুধু যে মা সন্তানের কাছে আসেন তা নয়, মাঝে মাঝে সন্তানও মায়ের কাছে ফেরে।
আহা! বড় ভাল লিখেছিস্!
ReplyDelete:)
DeleteBesh Bhalo hoyeche re
ReplyDeletethanks Tapa
Delete